মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল তারেক রহমান
তারেক রহমান- দুর্নীতির রাজপুত্র কিংবা বরপুত্র। যার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট কল্পকথাকেও হার মানিয়েছিল ২০০১-২০০৬ সালে। সাবেক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই জ্যেষ্ঠপুত্র দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখন লন্ডন পলাতক। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষমতায় থাকার সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদেশে টাকা পাচারসহ অভিযোগের পাহাড় জমে আছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তারেক রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে বনানীর হাওয়া ভবনে বসে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন।
বাংলাদেশী গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস তখন তারেক রহমানের ১২ কোটি টাকা আটক করেছিল। তারেক ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে ২১ কোটি টাকা পাচার করে। আমেরিকার এফবিআই এ ব্যাপারে তদন্ত করেছে।তারেক রহমানের নামে লন্ডনের একটি ব্যাংকে প্রায় ছয় কোটি টাকা পাওয়া গেছে এবং তা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া তারেক রহমান বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছিলেন। দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি (বাড়ির ঠিকানা: স্প্রিং ১৪, ভিলা: ১২, এমিরেটস হিলস, দুবাই)। এগুলো সব তারেক রহমানের দুর্নীতির একাংশ মাত্র।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করা অবৈধ সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান। প্রাপ্ত লভ্যাংশের ১০ হাজার পাউন্ড শর্মিলাকে দেন সংসার চালাতে। যা নিয়ে সন্তুষ্ট নন কোকো-পত্নী। কারণ প্রাপ্ত লভ্যাংশের বড় অংশ কেটে নিজের কাছে রেখে দেন তারেক।
মির্জা আব্বাসের শাহজানপুরের বাসার একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ‘দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামার ঘোষণা দেবার পর থেকই দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। অনুশোচনায় বারবার তারেক রহমানকে গালাগাল করছেন। বলছেন- তারেককে মাসোয়ারা দিতেই দুর্নীতি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। একজন সিনিয়র সংবাদিক এর কাছে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ২১শে আগস্ট এর ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকিত এবং বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর একটি। এই পুরো ঘটনার পুরো নীল নকশা তৈরি করেছিলেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের বিলাসবহুল এলাকা কিংস্টনের যে বাড়িতে থাকেন, তা ক্রয় করা হয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি মালেক এর নিজের নামে। সেই মালেকের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে যুক্তরাজ্যে পলাতক আরেক মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত আসামী চৌধুরী মঈনুদ্দিনের সাথে। তাদের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে আইএসসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সাথে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ব্রিটেনে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার ঘটনার সাথে এরাই জড়িত ছিল। যার ফলে ইতিমধ্যেই তারা ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানা যায়।
এক জনপ্রিয় নায়িকা ঢাকায় শুটিং করতে এলে, তাঁর শ্যুটিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তারেক জিয়ার নির্দেশে। পরবর্তীতে খোয়াব ভবনে দুই রাত কাটালে সেই নায়িকাকে আবার শ্যুটিং করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। সেসময় ভারত থেকে নায়িকা-গায়িকা নিয়ে এসে অনৈতিক কার্যকলাপ, মদ এবং সুরার উৎসব ছিল নিত্যনৈমত্যিক ব্যাপার এবং এই ঘটনাগুলো যখন ঘটতো তখন খোয়াব ভবনের পুরো এলাকা ঘিরে রাখতো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। তারেক জিয়া এবং তাঁর বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের তত্ত্বাবধানে ভারত থেকে একাধিক নায়িকাকে ভারত থেকে নিয়ে আসা হত এবং এসমস্ত নায়িকাদের নিয়ে বিভিন্ন রকমের ‘প্রাইভেট ফাংশন’ হত এবং পরবর্তীতে তাঁরা ফিরে যেত। ভারতীয় নায়িকা শিল্পা শেঠি বাংলাদেশে এসেছিলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের আমন্ত্রণে। তিনি দুইদিন বাংলাদেশে ছিলেন। এই দুইদিনই তিনি খোয়াব ভবনে ছিলেন এবং খোয়াব ভবনে গোপন পার্টিতে তাদের অতিথি ছিলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, তারেক জিয়া এবং তাদের ঘনিষ্ঠরা।
তারেক রহমানের লালসা ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিমত দিয়ে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, তারেক রহমানের উপযুক্ত শিক্ষার অভাব রয়েছে। তিনি নৈতিক শিক্ষা পাননি পরিবার থেকে। যার কারণে যৌবনের শুরুতেই বখে গিয়েছিলেন। তার এই গুণ্ডামির স্বভাব পরিণত বয়সের রয়ে গেছে। তারেকের অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে বিএনপিকে ভুগতে হচ্ছে। নেতৃত্বে বড় ধরণের পরিবর্তন না আসলে বিএনপিকে নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোন কারণ থাকবে।তারেক রহমানে বিষয়ে জানতে চাওয়া মাত্র ক্ষেপে যান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) একজন সিনিয়র নেতা। কিছুটা সময় নিয়ে রাগ সংবরণ করে তিনি বলেন, তারেক প্রথমত অহংকারী ও লোভী রাজনীতিবিদ। পারিবারিক রাজনীতির কারণে আজকে তাকে নেতা মানে কিছু অর্বাচীন মানুষ। নেতৃত্ব দেয়ার নূন্যতম যোগ্যতা তার নেই। অর্থ-বিত্তের লোভে সীমাহীন দুর্নীতি করে দেশকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছিল তারেক।তিনি আরো বলেন, তারেকের কারণে দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়েছিল।
কিছুদিন আগে রিজভী সাহেব বললেন তারেক রহমানের নেতৃত্বেই সরকারের পতন হবে। এখন আমার প্রশ্ন রিজভী সাহেবের কাছে দুর্নীতির গডফাদার, জঙ্গীদের গডফাদার, কুখ্যাত সন্ত্রাসী তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই ভাবে সরকার পতন করবেন? আপনাদের যে নেতা জেল খাটার ভয়ে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তার নেতৃত্বে সরকার পতনের আন্দোলন করবেন? এমন বক্তব্য দেওয়ার আগে দুই বার ভেবে নেওয়া উচিত।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
Comments