বাংলাদেশ এবং চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সম্মত হয়েছে
১১ জুলাই, ২০২৪, সকাল ১০:৪৭
পরিচিতি
বাংলাদেশ এবং চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে, যা আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করে এবং দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি করে। এই উন্নয়ন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের বেইজিং সফরের সমাপ্তি ঘটে, যেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সাথে আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৮ থেকে ১০ জুলাই, ২০২৪ তারিখে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং সফর অনুষ্ঠিত হয়। এই সফরে চীনের প্রধান নেতাদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়, যেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সফরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা চীনের পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সাথেও বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে পারস্পরিক আগ্রহের গভীর আলোচনার সুযোগ তৈরি করে।
এই সফরের ফলাফলগুলি বাংলাদেশ এবং চীনের অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করে এবং ভবিষ্যতের সহযোগিতার পথ সুগম করে।
আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করার চুক্তি
এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করার চুক্তি। উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনে এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি করে।
বাংলাদেশ এবং চীন উভয়েই এই পরিবর্তনটি তত্ত্বাবধান করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির ভূমিকা গুরুত্ব দিয়েছে। স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহারের মাধ্যমে, বাংলাদেশ এবং চীন একটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক বাণিজ্য পরিবেশ তৈরি করতে চায়।
এছাড়াও, বাংলাদেশ পক্ষ চীনা ব্যাংকগুলিকে বাংলাদেশে শাখা প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাগত জানিয়েছে এবং এর বিপরীত। এই উদ্যোগটি আরও আর্থিক সংহতি তৈরি করতে এবং উভয় দেশের ব্যবসার জন্য আরও সুযোগ প্রদান করবে।
আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক সমন্বয় জোরদার করা
দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক বিষয়গুলিতে সমন্বয় জোরদার করার উপরও মনোনিবেশ করেছে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার, মানবিক বিষয়গুলি, জলবায়ু পরিবর্তন, শক্তি পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়াগুলিতে অবস্থান সমন্বয় করতে এবং বৃহত্তর সংহতি গড়ে তুলতে প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করেছে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দ্বারা প্রস্তাবিত গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এর বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। চীনা পক্ষ জিডিআই বিষয়গুলিতে অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্রস্তুতি ব্যক্ত করেছে।
এছাড়াও, চীনা পক্ষ গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই) বাংলাদেশ পক্ষকে উপস্থাপন করেছে।
কূটনৈতিক মাইলফলক উদযাপন
এই সফর উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মাইলফলক উদযাপনেরও সুযোগ প্রদান করে। বাংলাদেশ পক্ষ চীনের পিপলস রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে অভিনন্দন জানিয়েছে।
উভয় পক্ষ ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ নিয়ে ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে সম্মত হয়েছে।
উন্নয়ন লক্ষ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশ এবং চীন তাদের উন্নয়ন লক্ষ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। চীনা পক্ষ ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ইউএন এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা সমর্থন করেছে।
বাংলাদেশের "স্মার্ট বাংলাদেশ" এর ভিশন ২০৪১ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। চীন এই ভিশনকে সমর্থন করেছে।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক
এই সফরে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। উভয় দেশ হাজার বছরের বন্ধুত্বের ইতিহাস এবং গভীর সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়েছে।
উভয় পক্ষ সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমর্থন
এই সফর উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। উভয় পক্ষ একে অপরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক সম্মান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
চীনা পক্ষ বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, ভিশন ২০৪১ এর আওতায় উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে, এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ এক-চীন নীতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
উপসংহার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফর বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করেছে, ভবিষ্যতের সহযোগিতার মঞ্চ তৈরি করেছে। স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর চুক্তি, আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানো, এবং আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক বিষয়ে সমন্বয় জোরদার করার চুক্তি উভয় দেশের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং পারস্পরিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়।
কর্মের আহ্বান
বাংলাদেশ এবং চীন তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে থাকবে, এটি অব্যাহত রাখতে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকদেরকে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করতে এবং প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের সময় করা চুক্তিগুলির সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনায় জড়িত হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
Comments