Skip to main content

সন্তান দওক নেওয়ার আইনি প্রকৃয়া | How to adopt a child in Bangladesh | বাংলাদেশের আইনে সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়ার উপায়

সন্তান দওক নেওয়ার আইনি প্রকৃয়া | How to adopt a child in Bangladesh | বাংলাদেশের আইনে সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়ার উপায়



দত্তক গ্রহণ সারা বিশ্বব্যাপি ব্যপক জনপ্রিয় একটা ব্যবস্থা হলেও বাংলাদেশের আইনে দত্তক গ্রহনের কোন বিধান নেই। দত্তকের গ্রহণের মাধ্যেমে একটা নিঃস্তান দম্পত্তি পান একটি সন্তান এবং একটা এতিম,অনাথ কিংবা পরিত্যাক্ত শিশু পায় একটা পরিবার। দত্তক সম্পর্কিত আইন থাকুক বা না থাকুক দত্তক গ্রহণ কিন্তু থেমে নেই। আজকের এই ভিডিওতে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব কি ভাবে বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে দত্তক নেওয়া যায়, দত্তক নেওয়ার জন্য কারা উপযুক্ত, দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া কি? ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে।

যেহেতু বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ এবং মুসলিম আইনে দত্তক নেওয়ার কোন বিধান নেই, তাই প্রচলিত আইনে বাংলাদেশে চূড়ান্ত দত্তক বা ফাইনাল অ্যাডপশন সম্পন্ন করা যায় না। তবে দত্তকের বিধান রয়েছে অভিভাবকত্ব আইনে।

১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত আইনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কোনো শিশুর দায়ভার নিতে পারেন অভিভাবক হিসেবে; পিতা বা মাতা হিসেবে নয়। অভিভাবকত্ব আর দত্তক এক বিষয় নয়।

অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আপনি দত্তক নিতে না পারলেও একটা বাচ্চার দায়ভার বা চাইল্ড কাষ্টডী নিতে পারবেন।
আইনঃ

১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা মোতাবেক ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর জন্য ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় কাস্টডি নেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীনে এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে।

দত্তক গ্রহণ বা কাষ্টডি পাওয়ার যোগ্যতা

একজন মানুষ দত্তক সন্তান গ্রহণ করতে চাইলে তার নিন্মলিখিত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজনঃ
১. নিঃসন্তান দম্পতি ইচ্ছে করলে পালক সন্তানের পিতামাতা হতে পারেন। সেই দম্পতিকে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুস্থ হতে হবে। এছাড়া তাদের মাঝে পালক সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে লালন-পালন করার মানসিকতা থাকতে হবে।

২. বিবাহিত, কিন্তু স্বামী মারা গেছেন এবং দ্বিতীয় বিবাহে আগ্রহ নেই, তবে আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক স্বাচ্ছন্দ্য আছে, এমন মহিলা পালক সন্তান গ্রহন করতে পারেন।

৩. কোন দম্পতির নিজের সন্তান বড় হয়ে গেছে কিন্তু তাদের সাথে থাকে না এমন দম্পতিও পালক সন্তান গ্রহন করতে পারেন।

৪. অবিবাহিত মহিলা যিনি বিয়ে করবেন না বলে ঠিক করেছেন, অথবা বিয়ের বয়সও নেই, কিন্তু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তিনি পালক সন্তান গ্রহণ করতে পারেন।

৫. সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতির মধ্যে যিনি সন্তান জন্মদানে সক্ষম, কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদে আগ্রহী নন, কিংবা দ্বিতীয় বিবাহেও আগ্রহী নন। তিনি পালক সন্তান গ্রহণ করতে পারেন।

৬. পালক সন্তান নিতে আগ্রহী পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে হবে এবং আইন অনুযায়ী দম্পতির বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। তবে ৩৫-৪৫ বছর বয়সী দম্পতি বেশি গ্রহণযোগ্য।

কি ধরনের শিশুকে দত্তক নেওয়া যায়

  •  অনাথ/এতিম শিশু যার পিতা-মাতা বা কোন অভিবাবক বেঁচে নেই

  • যে শিশুর পিতা-মাতা ঐ শিশুর প্রতিপালনে অক্ষম
  • পরিত্যাক্ত শিশু, ইত্যাদি।

আমার মনে হয় কোন শিশুকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে ঐ শিশুর ছবি সহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে, যাতে তার কোন দাবিদার থেকে থাকলে, যোগাযোগ করে অর্থাৎ দত্তক নেওয়ার পূর্বে শিশুটিকে লিগ্যালি ফ্রি কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া।

দত্তক নেওয়ার জন্য কোথায় শিশু পাওয়া যায়
১। দত্তক প্রদান করতে ইচ্ছুক এমন পিতা-মাতা বা সন্তানের অভিবাবক দের নিকট থেকে

২। ছোট মনি নিবাস থেকে (যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি) অভিভাবকহিন, পাচার হওয়ার সময় থেকে উদ্ধার বা পরিত্যাক্ত শিশুদের লালন পালনের জন্য নব্য গঠিত রংপুর এবং ময়মনসিংহ বাদে দেশের ৬ টি বিভাগে ৬ টি ছোটমনী নিবাস রয়েছে।

৩। বিভিন্ন এন.জি.ও এর থেকে।

প্রক্রিয়াঃ

অন্যান্ন দেশের মত বাংলাদেশে সরকারের কোনো স্বতন্ত্র দত্তক কর্তৃপক্ষ বা অ্যাডপশন এজেন্সি নেই। অ্যাডপশন বিষয়ক সকল এখতিয়ার শুধুমাত্র পারিবারিক আদালতের।

যেই বাচ্চাটিকে অ্যাাডপট করবেন বা কাস্টডী নিতে চান, তার বায়োলজিক্যাল প্যারেন্টস্‌ বা জন্মদাতা বাবা-মা কেউ যদি জীবিত থাকে, তাহলে একজন আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে তাদের কাছ থেকে অনাপত্তি পত্র, অ-প্রত্যাহার যোগ্য হলফ নামা এবং বাচ্চার জন্ম সনদ সংগ্রহ করে নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করতে হবে। এর পর ৬০ টাকা বা নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে বাচ্চাটি যেই এলাকায় বসবাস করে, সেই এলাকা যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত, সেই পারিবারিক আদালতে বাচ্চাটির অভিবাবকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে।

সরকারি শিশুমনি নিবাস বা হাসপাতাল বা অভিবাবক শূন্য পরিত্যাক্ত শিশুর ক্ষেত্রে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কে নির্দেশ দিতে পারেন, এটা বিবেচনা করার জন্য যে, যিনি কাস্টডী নিতে চাচ্ছেন তিনি আসলে উপযুক্ত কিনা, নেওয়ার জন্য।

আদালত সব কিছু বিবেচনা করে ঠিক মনে করলে অভিবাবক্ত্ব অনুমোদন করবেন।

যাইহোক এধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন পেতে কম-বেশি ৩ মাসের মত সময় লাগে। আদালত কর্তৃক অভিভাবকত্ব প্রাপ্তির পর দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পালক পিতা-মাতা সন্তানের বৈধ অভিভাবক হিসেবে গণ্য হবেন।

সম্পত্তির অধিকারঃ

বাংলাদেশের উত্তরাধিকার বিষয়ে প্রত্যেকটি মানুষের পারছোনাল ল ফলো করা হয়। যেমন- মুসলিমদের ক্ষেত্রে, মুসলিম শরিয়া ল, হিন্দুদের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মীয় আইন ইত্যাদি।

মুসলিম আইনে দত্তক পুত্র নেওয়ার কোন বিধান নেই। তবে পালক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করতে বাঁধা নেই। এবং মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী পালক পুত্র কোন ধরনের সম্পত্তির অধিকারি হয় না। আর তাই বাংলাদেশে কোন মুসলিম ব্যক্তি চাইল্ড কাস্টডি নিলে বা কোন বাচ্চা দত্তক গ্রহণ করলে আইন অনুযায়ী ঐ বাচ্চা বড় হয়ে কোন সম্পত্তি পাবে না।

তবে পালক পিতা চাইলে তার পালক পুত্রকে হেবা বা দান করে তার মোট সম্পত্তির সর্বোচ্চ ৩ ভাগের ১ ভাগ দিয়ে যেতে পারেন।

হিন্ধু এবং খ্রিষ্টানদের ক্ষেত্রে

বাংলাদেশে হিন্দু আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান থাকলেও শুধু ছেলে শিশু দত্তক নেওয়া যাবে। হিন্দু পুরুষ বিবাহিত, অবিবাহিত বা বিপত্নীক যা-ই হোক না কেন, তার দত্তক নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার সীমিত। একজন অবিবাহিত নারী দত্তক নিতে পারেন না। বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি দরকার। এমনকি বিধবা হিন্দু নারী দত্তক নিতে চাইলে তাকে স্বামীর মৃত্যুর আগে দেওয়া অনুমতি দেখাতে হবে। খ্রিস্টধর্মেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দত্তক নেওয়ার বিধান নেই। বাংলাদেশের খ্রিস্টানরাও শিশুর শুধু অভিভাবকত্ব নিতে পারেন।

ক্রস কান্ট্রি এ্যডাপশন বা একদেশ থেকে অন্য দেশে দত্তক নেওয়াঃ

এছড়া একদেশ থেকে অন্য দেশে দত্তক নিতে চাইলে উভয় দেশের আইন এবং আন্তজার্তিক আইন/বীধিমালা অনুসরণ করতে হবে। যেমন কোন আমেরিকান নাগরিক বাংলাদেশ থেকে শিশু দত্তক নিতে চাইলে, তাকে প্রথমে তিনি আমেরিকার যেই অঙ্গরাজ্যে থাকেন সেখানকার দত্তক আইন এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দত্তক প্রকৃয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। তার পর বাচ্চাটির পার্সপোর্ট করাতে হবে এবং যে দেশে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে সেই দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী বা একদেশ থেকে অন্যদেশে শিশু দত্তক দেওয়া নেওয়ার বিষয়টি সহজ করতে নেদারল্যান্ড এর রাজধানী হেগ- এ- ১৯৯৩ সালে প্রনীত হেগ কনভেনশন অন প্রোটেকশন অব চিলড্রেন অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন রেসপেক্ট অব ইন্টার কান্ট্রি অ্যাডপশন (হেগ এ্যাডাপশন কনভেনশন)। তবে বাংলাদেশ এই কনভেনশনের স্বাক্ষর বা অনুসমর্থন করেনি।

এছাড়াও ১৯৮৯ সালে গৃহীত জাতী-সংঘ শিশু অধিকার সনদ, UNCRC (United Nations Convention on the Rights of the Child). বাংলাদেশ এই সনদের স্বাক্ষর করলেও এই কনভেনশনের ২১ নম্বর আর্টিকেল অর্থ্যাৎ দত্তক গ্রহণ বিষয়ক অনুচ্ছেদে আপত্তি উত্থাপন করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর war-babies বা যুদ্ধ শিশু দের অভিভাবকত্ব দেবার জন্য ১৯৭২ সালে একটি দত্তক আইন করা হলেও পরবর্তীতে নানা অভিযোগের ভিত্তিকে ১৯৮২ সালে আইনটি বাতিল করা হয়।

ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে এই দত্তক বিষয়ে খুব সহজ এবং সুন্দর আইন বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের পার্শবর্তী দেশে ভারতেও Central adoption resource authority (CARA/কারা) নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা এবং অনেক সুন্দর আইনি ব্যবস্থা রয়েছে এ্যাডপশনের জন্য।

বাংলাদেশেও এই বিষয়টার একটা আনুষ্ঠানিক সমাধান করাটা এখন সময়ের দাবী, তবে সেটা কারোর ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়ে নয়। ইসলামী শরিয়া মেনেই, কিয়াস বা ইজতিহাদ অনুসরণ করে এই বিষয়টির একটা আইন প্রণয়ন করা যায় কি না সেটা নিয়ে বিশ্ব-বিখ্যাত ইসলামী স্কলারদের সাথে বসে গবেষণা করে দেখা যেতে পারে।

দত্তক গ্রহণ ছাড়াও সারোগেছির মাধ্যমে অনেকে সন্তানের পিতা-মাতা হয়ে থাকেন, বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়াতে সারোগেছি, এই সংক্রান্ত আইন এবং ইসলামে সারোগেছি সপর্কে জানতে এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
বন্ধুরা আশা করি এই লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে, ভালো লাগলে এই লেখাটি সোসাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে পারেন। এই রকম আরো পোস্ট পেতে চাইল আমাদের নিউজ লেটারে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন, তাহলে পরবর্তীতে নতুন লেখা প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে আপনার ইমেলে চলে যাবে। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে, সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।


Comments

Popular posts from this blog

How to Protect Your Intellectual Property Rights in Bangladesh

Banking Litigation and Dispute Resolution