Bangladesh Declaration of Independence: Full Analysis with Photos (1971) The Juridical Birth and Enduring Resonance: An Exhaustive Analysis of the Declaration of Independence of Bangladesh By Afzal Hosen Mandal Published on: April 14, 2025 Table of Contents 1. Introduction: Situating the Declaration 2. Antecedents and Catalysts 3. The Declaratory Acts 4. Intrinsic Legal Character and Constitutional Ramifications 5. Implications for Public International Law 6. Symbolism, National Identity, and Collective Memory 7. Historical Controversies and Judicial Clarification 8. Contemporary Relevance and Unfinished Legacies ...
৭ নভেম্বর: সেনানিবাসে মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্র
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মধ্যরাতের পর পরই ঢাকা সেনানিবাসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পৃষ্ঠপোষক তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্নেল তাহেরের বিপ্লবী সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে হত্যা ও লুটপাট শুরু করে। এটি বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক জঘন্য অধ্যায়।
১৫ আগস্টের বর্বরতার পর ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তারা যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা অকালে শেষ হয়ে যায়। এক নারী চিকিৎসকসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তা নৃশংস সহিংসতায় নিহত হন। ৭ নভেম্বর সকালে তিন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা সেনা কমান্ডারকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমান তখন খুনিদের বেকসুর খালাস দেন এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। স্বাধীনতাবিরোধীরা সারা দেশে পুনর্বাসন শুরু করে। বাংলাদেশের মাটিতে যে ধুলোবালি, চরমপন্থা ও মৌলবাদের উত্থান হয়েছে তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
সেনানিবাসে জিয়াউর রহমানের নীলনকশা ও নৃশংস গণহত্যা
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিরা বঙ্গভবনে অবসর সময় কাটাচ্ছিল। কিন্তু একই সঙ্গে সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। সিজিএস খালেদ মোশাররফ, ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার সাফায়াত জামিল ও ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু জিয়াউর রহমান খুনিদের সেনানিবাসে ফিরিয়ে আনতে কিছুই করেননি। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতেও রাজি হননি তিনি। সেনাপ্রধানকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা পরে নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করেন।
এরপর ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর মধ্যরাতে খালেদ মোশাররফ, শাফায়াত জামিল, এটিএম হায়দার ও হুদার অনুগত সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা বঙ্গভবন ঘেরাও করেন এবং জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করেন। তাদের চাপে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা পরদিন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু এরই মধ্যে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান ও এইচ এম মনসুর আলীকে গোপনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অভ্যুত্থান কর্মকর্তারা তথ্য জানতে পেরে বিস্মিত হন।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর অভ্যুত্থানের সদস্যরা অশান্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজছিলেন। একই সঙ্গে গৃহবন্দী সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্র করছিলেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহেরকে ব্যবহার করেছিলেন যিনি সমাজতন্ত্রের স্বপ্নে ছিলেন। তাহের তার বিপ্লবী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেনানিবাসে উস্কানিমূলক লিফলেট বিতরণ করেন। সাধারণ সৈন্যরা সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল। সেনানিবাসে চেইন অব কমান্ড ভেঙে যায় এবং চারদিকে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। সৈন্যরা, প্রধানত পাকিস্তান ফেরতরা, একটি নারকীয় গণহত্যায় জড়িয়ে পড়ে।
জিয়াউর রহমান গৃহবন্দী থেকে মুক্তি পেতে তাহেরের সাহায্য নিলেও ক্ষমতায় আসার সময় তিনি তার স্বভাব দেখিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বীর ক্যাপ্টেনদের হত্যার পর সেনানিবাসে বিশৃঙ্খলার পুরো দায়-দায়িত্ব নিয়ে তাহেরকে ফাঁসিও দেন তিনি। ক্যান্টনমেন্টে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় তাহেরকে বিপদে ফেলা জিয়ার পক্ষে খুব সহজ ছিল।
বঙ্গবন্ধুর খুনি মহিউদ্দিন ও জিয়াউর রহমানের মধ্যে লজ্জাজনক সম্পর্ক
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মধ্যরাতের পর সেনানিবাসে সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্টের সামনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর খুনি ফিল্ড রেজিমেন্টের মেজর মহিউদ্দিন উত্তেজিত সামরিক সৈন্যদের সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডি৩২ নম্বর রোডের বাসায় ছয়-সাত রাউন্ড গুলি ছোড়েন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সব খুনি দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তারা বিশেষ কিছু কারণে মহিউদ্দিনকে দেশে রেখে যায়। তিনি জিয়াউর রহমানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং ঘটনার পর সেনানিবাসে অবস্থান করেন। এই খুনি মহিউদ্দিনই জিয়াকে গৃহবন্দী থেকে মুক্ত করে ফিল্ড রেজিমেন্টে নিয়ে যান।
এরপর জিয়াউর রহমান উপস্থিত উত্তেজিত সৈন্যদের উস্কানি দেন, যার ফলে তারা ধীরে ধীরে নৃশংস হয়ে ওঠে। এই সৈন্যদের বেশিরভাগই পাকিস্তান থেকে ফিরেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্য তাদের সঙ্গে যোগ দেননি। তাদের নৃশংস নৃশংসতায় ওই রাতে একজন নারী চিকিৎসকসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। তারা সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীর স্ত্রীকেও হত্যা করে।
জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও কে ফোর্সের প্রধান খালেদ মোশাররফ, আরেক সেক্টর কমান্ডার ও ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম উদ্যোক্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল এটিএম হায়দার এবং সাব-সেক্টর কমান্ডার ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি কর্নেল হুদাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
পরে কুখ্যাত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার বানচাল করতে ৮ নভেম্বরকে জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটা জিয়াউর রহমানের অমানবিক পদক্ষেপ। একই সঙ্গে জাসদের জনগণ একে সৈনিক বিপ্লব দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করে।
যাইহোক, নভেম্বরের ষড়যন্ত্র এবং গণহত্যা সম্পর্কে বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার লেখা শিরোনাম থেকে বোঝা যায় যে রাজধানীর বাইরে ৭ নভেম্বরের ঘটনার কোনও পরিণতি ছিল না। দেশের কোথাও কোনো বিপ্লব হয়নি। কেউ সংহতি প্রকাশ করেনি। এমনকি সব সৈন্য সেনা কর্মকর্তাদের বাড়িঘর লুটপাট এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নৃশংস নির্যাতন ও হত্যার সাথে জড়িত ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো বেঙ্গল ইউনিট এই গণহত্যায় অংশ নেয়নি।
৭ নভেম্বর বিএনপির নৃশংসতা ও রাজনৈতিক অসুস্থতা
কিছু বামপন্থী দল তাদের ঐতিহাসিক ভুল ও দুর্বলতা ঢাকতে এই দিনটিকে 'সামরিক বিপ্লব' হিসেবে পালন করে আসছে। কর্নেল তাহের ও তার সহযোদ্ধারা জিয়াউর রহমানের ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করেছিলেন এবং সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল্য জিয়াকে নিজের জীবন দিয়ে দিতে হয়েছিল। এমনকি স্বাধীনতার পরও তারা যেভাবে বিপ্লবের শ্লোগান দিয়েছিল এবং লাখ লাখ প্রতিশ্রুতিশীল তরুণকে উস্কে দিয়েছিল, সেই রাজনৈতিক ভুলের পর রাতারাতি তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার দায় এড়াতে, নিজেদের রাজনৈতিক ভুল ঢাকতে তারা দেশের শ্রেষ্ঠ সেনা কমান্ডারদের নৃশংস মৃত্যুর দিনটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের গণহত্যার ওপর নির্ভর করে তার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেন। তিনি তার সৈন্য এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রক্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশের 'পাকিস্তানীকরণের' ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে সেই গণহত্যার সাথে জড়িতদের সম্মানিত করেন। এমনকি যারা মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধাদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তাদের বিচারও তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
তাই এই দিনটিকে রাজনৈতিক রঙে 'জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস' হিসেবে পালনের নির্দেশ দেন জিয়া। বিএনপি-জামায়াত জোট নিয়মিতভাবে দিবসটি পালন করে আসছে। কিন্তু বাস্তবে এটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি লজ্জাজনক দিন। এটা শোকের দিন।
Comments