Skip to main content

হিন্দু আইনে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসাবের নিয়ম (দায়ভাগা পদ্ধতি) Hindu Law of Inheritance

হিন্দু আইনে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসাবের নিয়ম (দায়ভাগা পদ্ধতি) Hindu Law of Inheritance





হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
 ১। দায়ভাগ; 
২। মিতাক্ষরা; 

বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও আসামে দায়ভাগ মতবাদ প্রচলিত আছে এবং ভারতের অ-বাঙ্গালি সমাজে, অর্থ্যাৎ মুম্বাই, মাদ্রাজ, পাঞ্জাব মিথিলা, বেনারস, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি অঞ্চলে মিতাক্ষরা মতবাদ প্রচলিত আছে।

এই দায়ভাগ এবং মিতাক্ষরা হল আসলে হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বা সংহিতার আলোকে রচিত দুইটি বই। মিতাক্ষরা হল যাজ্ঞবল্ক্য-সঙ্গহিতার উপর একটি চলতি বর্ণনা। একাদশ শতাব্দির শতাব্দীর শেষের দিকে বিজনেশ্বর কর্তৃক লিখিত হয়। অপরদিকে দায়ভাগ কোন বিশেষ সংহিতার উপর রচিত নয়, এটা হল কতগুলো সংহিতার সারসংক্ষেপ, দায়ভাগ মতবাদের প্রবক্তা হলেন জিমুতবাহন, দ্বাদশ শতাব্দির প্রথম দিকে কোন এক সময় তিনি দায়ভাগ রচনা সমাপ্ত করেন বলে ধারণা করা হয়।

আজকের এই পোস্টে আমরা দায়ভাগ পদ্ধতিতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে আলোচনা করব-

দায়ভাগা মতবাদ অনুযায়ী, যারা মৃত ব্যক্তির আত্মার কল্যানের জন্য পিণ্ডদানের অধিকারী, কেবলমাত্র তারাই মৃত ব্যক্তির সপিণ্ড এবং যোগ্য উত্তরাধিকারী।

পিণ্ড অর্থ হল শরীর: মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধের সময় মৃত ব্যক্তির পিণ্ড বা শরীরের সাথে রক্ত সম্পর্কীয় উক্তরাধিকারীগন মৃত ম্যক্তির আত্নার কল্যাণে কোন কিছু উৎসর্গ করলে তাকে পিণ্ডদান বলে।

দায়ভাগ মতবাদ অনুসারে উক্তরাধিকারী ৩ প্রকার:

ক। সপিণ্ড, 
খ। সকুল্য  
গ। সমানোদক।

দায়ভাগ মতে সপিণ্ড হল হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে সবচেয়ে নিকটবর্ত উত্তরাধিকারী। যে সকল ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির আত্নার কল্যাণের জন্য পিণ্ডদান করেন এবং মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকলে যাদের মৃত্যুতে তিনি পিণ্ডদানের যোগ্য ছিলেন তারা সবাই পরস্পরের সপিণ্ড।

পুরুষ সপিণ্ডর সংখ্যা ৪৮জন এবং মহিলা সপিণ্ডর সংখ্যা ৫ জন মিলে সর্বমোট ৫৩ জন সপিণ্ড হবে।

তবে সাধারনত ২০ জন পর্যন্ত উত্তরাধিকারিত্ব কার্যকরী হয়।

নিম্ন তালিকা অনুসারে সপিণ্ডগন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন:
১। পুত্র,
২। পুত্রের পুত্র,
৩। পুত্রের পুত্রের পুত্র,
৪। স্ত্রী (পুত্রের স্ত্রী/পুত্রের পুত্রের স্ত্রী/পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী),
৫। কন্যা,
৬। কন্যার পুত্র,
৭। পিতা,
৮। মাতা,
৯। ভ্রাতা, সহোদর ভ্রাতা না থাকলে বৈমাত্রেয় ভ্রাতা,
১০। ভ্রাতুষ্পুত্র, সহোদর না থাকলে বৈমাত্রেয় ভ্রাতার পুত্র,
১১। ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র, সহোদও ভ্রাতা না থাকলে বৈমাত্রেয় ভ্রাতার পুত্রের পুত্র,
১২। বোনের পুত্র,
১৩। পিতার পিতা,
১৪। পিতার মাতা,
১৫। পিতার ভ্রাতা,
১৬। পিতার ভ্রাতার পুত্র,
১৭। পিতার ভ্রাতা পুত্রের পুত্র,
১৮। পিতার ভগ্নীয় পুত্র,
১৯। পিতার পিতার পিতা,
২০। পিতার পিতার মাতা,
২১। পিতার পিতার ভ্রাতা,
২২। পিতার খুড়ার পুত্র,
২৩। পিতার খুড়ার পুত্র,
২৪। পিতার পিসির পুত্র,
২৫। পুত্রের কন্যার পুত্র,
২৬। পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র,
২৭। ভ্রাতার কন্যার পুত্র,
২৮। ভ্রাতার পুত্রের কন্যার পুত্র,
২৯। খুড়ার কন্যার পুত্র,
৩০। খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র,
৩১। পিতার খুড়ার কন্যার পুত্র,
৩২। পিতার খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র,
৩৩। মাতার পিতা,
৩৪। মামা,
৩৫। মামার পুত্র,
৩৬। মামার পুত্রের পুত্র,
৩৭। মাসির পুত্র,
৩৮। মাতার পিতার পিতা,
৩৯। মাতার পিতার ভ্রাতা,
৪০। মাতার পিতার ভ্রাতার পুত্র,
৪১। মাতার পিতার ভগ্নির পুত্র,
৪২। মাতার পিতার ভগ্নির পুত্র,
৪৩। মাতার পিতার পিতার পিতা,
৪৪। মাতার পিতার পিতার ভ্রাতা,
৪৫। মাতার পিতার পিতার ভ্রাতার পুত্র,
৪৬। মাতার পিতার পিতার ভ্রাতার পুত্রের পুত্র,
৪৭। মাতার পিতার পিতার ভ্রাতার পুত্রের পুত্র,
৪৮। মাতার ভ্রাতার কন্যার পুত্র,
৪৯। মাতার ভ্রাতার পুত্রের কন্যার পুত্র,
৫০। মাতার পিতার ভ্রাতার কন্যার পুত্র,
৫১। মাতার পিতার ভ্রাতার পুত্রের কন্যার পুত্র,
৫২। মাতার পিতার পিতার ভ্রাতার কন্যার পুত্র,
৫৩। মাতার পিতার পিতার ভ্রাতার পুত্রের কন্যার পুত্র
হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে ৫ জন সপিন্ড– মহিলা:
১। বিধবা স্ত্রী,
২। কন্যা,
৩। মাতা,
৪। পিতার মাতা,
৫। পিতার পিতার মাতা।

এই ৫ জন জীবনস্বত্ত্ব জমি ভোগ দখল করতে পারেন কিন্তু হস্থান্তর করতে পারেন না। তাদের মৃত্যুর পর উক্ত সম্পত্তি মৃত ব্যক্তির নামে ন্যস্ত হয়ে পুনরায় নিকটস্থ উত্তরাধিকারীর কাছে চলে যায়। তবে বিধবা স্ত্রী অস্বচ্ছল হলে কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে জমি বিক্রি করতে পারেন।(যেমন- মৃতের শ্রাদ্ধ, মৃতের কৃতঋণ পরিশোধ, নাবালক সন্তানের পড়ালেখার খরচ ইত্যাদি)

খ। সকুল্য:

প্রপিতামহের উর্ধ্বতন ৩ পুরুষ সকুল্য নামে পরিচিত। সপি-র ৫৩ জনের কেউ বিদ্যমান না থাকলে সকুল্যগন সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে। সকুল্যেও মোট সংখ্যা ৩৩ জন সকলেই পুরুষ।

গ। সমানোদকঃ
সকুল্যের উর্ধ্বতন ৭ পুরুষকে সমানোদক বলে। সপিণ্ড ও সকুল্যের কেউ বিদ্যমান না থাকলে সমানোদকগন উত্তরাধিকার লাভ করে। সমানোকদের সংখ্যা ১৪৭ জন। এরা সকলেই পুরুষ।

সপিণ্ড, সকুল্য ও সমানোদক এ ৩ শ্রেণীর উত্তরাধিকারদের কেউ না থাকলে ধর্মগুরুর নিকট সম্পত্তি চলে যাবে। ধর্মগুরুও না থাকলে সম্পত্তি রাষ্ট্রের (সরকারের) নিকট চলে যাবে।

________________
হিন্দু উত্তরাধিকারের সম্পত্তি বণ্টনের সাধারণ নিয়মঃ
সপিন্ডদের তালিকা থেকে ১ থেকে ৪ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত কেউ জীবিত না থাকলে (৫ নম্বর ক্রমিকের) কন্যা সম্পত্তি পাবে। কন্যাদের মধ্যে কুমারী কন্যার দাবী অগ্রগণ্য, এর পর পুত্রবতী বা পুত্র সম্ভবা কন্যাদের দাবী। কন্যা উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তি পেলে তার মৃত্যুতে তার পুত্র সন্তান সম্পত্তি পাবে। তবে কন্যার পুত্র না থাকলে পুত্রের পুত্র কোন সম্পত্তি পাবে না।

এক বা একাধিক পুত্র থাকলে তারাই সমুদয় সম্পত্তি পাবে। নিকটবর্তী পুরুষ ওয়ারিশ থাকলে পরবর্তীরা সম্পত্তি পাবে না, যেমন পুত্র থাকলে পুত্রের-পুত্র সম্পত্তি পাবে না।

মৃত ব্যক্তির পূত্র ও স্ত্রী থাকলে, স্ত্রী এক পূত্রের সমান অংশ পাবে। একাধিক স্ত্রী থাকলে স্ত্রীর অংশ স্ত্রীদের মধ্যে তুলাংশে বন্টন হবে। স্ত্রী যেরূপ অংশ পাবে, পূত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী বা পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীও অনুরূপ অংশ পাবে।

মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের সময় অংশীদারদের মধ্যে যদি কোন অংশীদার মৃত থাকেন, তবে মৃত ব্যক্তির জীবিত উত্তরাধিকারগণ ওয়ারিশ হবে।

স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী জীবনস্বত্ব (Life Interest) ভোগ করেন। তার মৃত্যর পর উক্ত সম্পত্তি পুত্রদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়।

কোন হিন্দু-বিধবা মহিলা পুনরায় বিবাহ করলে তাকে তার পূর্বের স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি মৃত স্বামীর জীবিত অন্যান্য ওয়ারিশের নিকট ছেড়ে দিতে হয়।

একমাত্র হিন্দু ধর্মে দত্তক পুত্র গ্রহনের বিধান আছে। তাই দত্তক পুত্র স্বাভাবিক পুত্রের (১/৩) তিন ভাগের এক ভাগ পাবে।

হিন্দু আইনে সন্ন্যাসী উত্তরাধিকার হয় না। সন্ন্যাসীকে সংসার ত্যাগী হিসাবে মৃত ধরা হয়।

অন্ধ, বধির, মূক, অঙ্গহীন, পুরুষত্বহীন এবং হাবাগোবা পুরুষ ও মহিলাগণ হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। এমনকি দূরারোগ্য কুষ্ঠ-ব্যধীগ্রস্ত ব্যক্তিগণও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। আইনের দৃষ্টিতে তাদেরকে মৃত হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বৈধ সন্তান, পিতামহ ও পিতামহীর উপর উত্তরাধিকারিত্ব বর্তায়।

স্বামী অসতী স্ত্রী রেখে মারা গেলে, সেই অসতী স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি পাবে না। তবে বিধবা স্ত্রী আইন সঙ্গতভাবে সম্পত্তি পাওয়ার পর অসতী হলে প্রাপ্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে না। অসতীত্বের কারনে মাতাও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়। তবে অসতীত্বের কারনে কোন নারী, স্ত্রী-লোকের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় না।
কোন হিন্দু লোক ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়।

হত্যাকারী এবং তার ওয়ারিশ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে।
____

Comments

Popular posts from this blog

Ahmedabad Satyagraha in Gujarat (1918)

Ahmedabad Satyagraha in Gujarat (1918) Introduction The Ahmedabad Satyagraha of 1918 marks a significant chapter in India's struggle for independence. It was a labor strike initiated by the mill workers in Ahmedabad, Gujarat, demanding an increase in wages. The strike was not just a protest against economic injustice, but it also symbolized the fight against oppressive colonial rule. The term 'Satyagraha' was coined by Mahatma Gandhi, which translates to 'insistence on truth' or 'soul force'. It was a method of non-violent resistance, and the Ahmedabad Satyagraha was one of the early instances where this method was employed in the Indian independence movement. The Satyagraha in Ahmedabad was a turning point as it marked the beginning of Gandhi's active involvement in Indian politics. It was here that Gandhi first introduced his methodology of peaceful resistance and negotiation as a means to achieve political and social change. The event holds histori...

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন

বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন সুচিপত্র ভূমিকা পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭) ব্রিটিশ শাসনের প্রাথমিক বছরগুলি (1757-1857) 1857 সালের বিদ্রোহ এবং এর প্রভাব প্রয়াত ঔপনিবেশিক সময়কাল (1858-1947) বঙ্গভঙ্গ (1905) ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভারত বিভাজন (1947) উপসংহার বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন (1757-1947) পরিচয় বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন 1757 থেকে 1947 সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাব্দী বিস্তৃত ছিল। এই সময়কালে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন দেখা যায় যা এই অঞ্চলে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। বাংলার ইতিহাসের জটিলতা এবং ঔপনিবেশিকতার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এর স্থানকে উপলব্ধি করার জন্য এই ঐতিহাসিক যুগকে বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ...

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড সূচিপত্র ভূমিকা অধ্যায় 1: ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনার অধিকার ও দায়িত্ব বুঝুন অধ্যায় 2: বহিষ্করণ ও ভাড়াদারি শেষ অধ্যায় 3: ভাড়া ও নিরাপত্তা জমা অধ্যায় 4: রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত অধ্যায় 5: আফজাল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস কীভাবে ভাড়াটিয়া পরামর্শ দিতে পারে উপসংহার অতিরিক্ত সংস্থান যোগাযোগের তথ্য ভূমিকা ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইন বুঝতে ভাড়াটিয়াদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পূর্ণ গাইডের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের তাদের সম্পত্তি পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা। আপনি একজন অভিজ্ঞ ভাড়াটিয়া হোক বা শুরু করছেন, এই নিবন্ধটি আপনাকে আপনার অধিকার ও দায়িত্ব, বহিষ্করণ প্রক্রিয়া, ভাড়া ও নিরাপত্তা জমা, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, এবং আফজাল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস কীভাবে বিশেষজ্ঞ আইনি পরামর্শ দিতে পারে তা ব...