উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক নামজারি সেবা প্রদান সংক্রান্ত ।


উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক নামজারি সেবা প্রদান সংক্রান্ত ।

লেখকঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার


প্রকাশের তারিখঃ ২৭ মাঘ ১৪২৩ / ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭


ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহের মধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসের ভূমিকা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। বিদ্যমান বিধি-বিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন-চর্চা, অন্যান্য উপজেলা ভূমি অফিস হতে লব্ধকৃত উত্তম চর্চা স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাস্তবায়ন, স্বল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে জনগণকে সেবা প্রদান, তথ্য-প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার, সুদৃশ্যমান অফিস ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর দপ্তর-প্রধান হিসাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এঁর সাফল্য নির্ভর করে। ভূমির সঙ্গে প্রায় সকল শ্রেণি ও পেশার জনগণের


বহুমাত্রিক সম্পৃক্ততা থাকায় উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক যথাযথ সেবা প্রদান একান্তভাবে কাম্য। নামজারি উপজেলা ভূমি অফিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। কিন্তু, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কোন কোন উপজেলা ভূমি অফিস হতে উক্ত বিষয়ে যথাযথভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে না। উল্লেখ্য, এই কার্যক্রমকে আরও গতিশীল, নির্ভুল, সহজতর ও গণমুখী করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের a2i Programme হতে ইতোমধ্যে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে কোন কোন উপজেলায় ই-নামজারি সিস্টেম (e-mutation) চালু করা হয়েছে।


০২। উপর্যুক্ত প্রেক্ষাপটে নামজারি-জমাভাগ ও একই প্রকৃতির অন্যান্য মামলা দ্রুততার সঙ্গে ও নির্ভুলভাবে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ অনুসরণ করা আবশ্যক:


(১) নামজারি ও জমাভাগ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত সকল নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ;


(২) সরকারের ধার্যকৃত ফি-সহ সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস হতে প্রদেয় সকল ধরনের সেবার জন্য প্রযোজ্য বিষয় নিয়ে নাগরিক সনদ (Citizen Charter) প্রস্তুতকরণ এবং দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন;


(৩) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ছবি, ফোন নম্বর ইত্যাদি দৃশ্যমানভাবে নাগরিক সনদে প্রদর্শন;


(৪) স্টাফদের জন্য আইডি কার্ডের ব্যবস্থাকরণ এবং ফ্রন্ট ডেস্কে সার্বক্ষণিক একজনকে দায়িত্ব প্রদান;


(৫) নামজারি সংক্রান্ত সরকারি ফি-এর বিষয়টি জনগণের কাছে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ;


(৬) নামজারির আবেদন প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ;


(৭) কোন অবস্থাতেই কোন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক নামজারির আবেদন গ্রহণ না করা;


(৮) উপজেলা ভূমি অফিসের প্রত্যেক কর্মচারীর দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে বণ্টন। তবে, নামজারির আবেদনের সংখ্যা বেশি হলে অধিক্ষেত্র উল্লেখপূর্বক একাধিক কর্মচারীকে লিখিতভাবে দায়িত্ব প্রদান;


(৯) নামজারি সংক্রান্ত অথবা অন্য যেকোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পাদনের জন্য কর্মবণ্টনকে অনুসরণ করা;


(১০) আবেদন প্রাপ্তির দিনে নামজারি মামলা নম্বর, বিষয় ও পরবর্তী তারিখ উল্লেখপূর্বক আবেদনকারীকে একটি রশিদ প্রদান;


(১১) সহকারী কমিশনার (ভূমি) অথবা তাঁর অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা কোন কারণে অনুপস্থিত থাকলেও আবেদন প্রাপ্তির দিনেই নামজারির মামলা নম্বর ও পরবর্তী তারিখ উল্লেখপূর্বক আবেদনকারীকে একটি রশিদ প্রদান;


(১২) আবেদনকারীর পূর্ণাঙ্গ নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) আবেদন ফরমে উল্লেখ করার ব্যবস্থাকরণ;


(১৩) আবেদন দাখিল অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে মামলার ক্রমিক নম্বর প্রদান করতে হবে। মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তবে, জনস্বার্থ/বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে মামলার সংক্ষিপ্ত তারিখ নির্ধারণ করা যেতে পারে;


(১৪) কম্পিউটার কম্পোজ করে মামলার প্রতিটি পদক্ষেপের প্রথম অনুচ্ছেদে (para) আদেশের ক্রমিক নম্বর, মামলার তারিখ, বিষয়বস্তু ইত্যাদি তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট নামজারি সহকারী সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করবেন। আর একই তারিখের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কম্পিউটার কম্পোজ করে আদেশ প্রদান করবেন অথবা নিজ হস্তে আদেশনামা লিখবেন এবং অনুস্বাক্ষর ও স্বীয় দপ্তরের সিল দিবেন;


(১৫) আদেশের ওপর গৃহীত ব্যবস্থা" সম্পর্কিত কলামে সংক্ষেপে সংশ্লিষ্ট নামজারি সহকারী কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার বিষয় উল্লেখ করা;


(১৬) আবেদিত জমি সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা-কে নির্দেশ প্রদান;


(১৭) জটিল প্রকৃতির বিষয় হলে সার্ভেয়ার/কানুনগো-কে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ প্রদান;


(১৮) মাঝে মাঝে স্বয়ং সরেজমিন পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ;


(১৯) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কানুনগো/সার্ভেয়ার/ইউনিয়ন ভূমি সহকারী/উপ-সহকারী কর্মকর্তা-কে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব না হলে সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে হবে এবং যৌক্তিক বিবেচিত হলে সময় মঞ্জুর করা যেতে পারে;


(২০) প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর শুনানির জন্য ধার্যকৃত তারিখ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিতকরণ ও সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে শুনানি গ্রহণ;


(২১) কোন কোন ক্ষেত্রে জারিকারক গন্তব্য স্থানে না পৌঁছে “প্রাপককে পাওয়া গেল না” মর্মে প্রতিবেদন দেন। এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে উক্ত প্রতিবেদন জারির সত্যতা যাচাইকরণ;


(২২) সংশ্লিষ্ট সকল দলিলপত্র এবং প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত প্রদান;


(২৩) সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মূল দলিল দেখা;


(২৪) নোটিশ প্রাপ্তির পরও কোন পক্ষ উপস্থিত না হলে সংযুক্ত দলিলাদির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ;


(২৫) প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এবং একটি নির্ধারিত সময়ে শুনানি গ্রহণ। তবে, কোন যৌক্তিক কারণে নির্ধারিত সময়ে বা তারিখে দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা না গেলে পূর্বদিনে দপ্তরের নোটিশ বোর্ডে উহা উল্লেখকরণ অথবা টেলিফোন বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিতকরণ;


(২৬) পরবর্তী তারিখ ধার্য করার যৌক্তিকতা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে;


(২৭) মামলা জটিল প্রকৃতির হলে প্রয়োজনে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ;


(২৮) মামলার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক যথাশীঘ্র সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তিকরণ;


(২৯) বিদ্যমান আইন, বিধি-বিধান, সরকারের নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিকভাবে মামলার যে কোন আদেশ প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোন ভুল আদেশের ফলে পক্ষগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলার উদ্ভব,সামাজিক অসন্তোষ, দপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া ইত্যাদি নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে;


(৩০) আদেশনামা কম্পিউটার-কম্পোজকৃত হলে আদেশের বামপাশে "আমার নির্দেশে টাইপকৃত এবং আমার কর্তৃক যাচাইকৃত"- এই মর্মে টাইপ করে/সিল দিয়ে তার ওপর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক অনুস্বাক্ষর প্রদান;


(৩১) নামজারির পরে নতুন হোল্ডিং নম্বর প্রদান এবং ডিসিআর প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ;


(৩২) অনুমোদিত খতিয়ানসমূহ মৌজাভিত্তিক সংশোধনের ব্যবস্থাকরণ এবং ১০০টি খতিয়ান হলে মৌজাভিত্তিক আলাদাভাবে বাঁধাই করার ব্যবস্থাকরণ;


(৩৩) নামজারির অনুমোদিত খতিয়ান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও জেলা রেকর্ড রুমে প্রেরণ;


(৩৪) সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর আদেশের ভিত্তিতে জেলা রেকর্ড রুমের রেকর্ড ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রেকর্ড সংশোধনের ব্যবস্থাকরণ। অন্যথায় আবেদনকারী পুরানো রেকর্ডের সত্যায়িত কপি পাবেন। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে;


(৩৫) মামলা নিষ্পত্তির নথি ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থাকরণ;


(৩৬) নামজারি ব্যতীত অন্যান্য মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অনুরূপ পদ্ধতি অবলম্বন করা;


(৩৭) a2i Programme-এর আওতায় বাস্তবায়িত ই-নামজারি সিস্টেম (e-mutation) পর্যায়ক্রমে চালুর ব্যবস্থাকরণ;


(৩৮) ভূমি অফিসসমূহে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণ;


(৩৯) সেবা গ্রহণকারী জনগণের জন্য বসার স্থান নিশ্চিতকরণ;


(৪০) দপ্তরে একটি অভিযোগ বাক্স সংরক্ষণ এবং নির্ধারিত মেয়াদে অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ;


(৪১) Time, Cost and Visit (TCV) কমানোর লক্ষ্যে নামজারি ও জমাখারিজের ক্ষেত্রে সেবা-পদ্ধতি সহজিকরণ;


(৪২) অন্য কোন উপজেলা ভূমি অফিসের উত্তম চর্চার অনুসরণ এবং নিজ দপ্তরের উদ্ভাবন সংক্রান্ত বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ এবং উদ্ভাবিত তথ্যাদি স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ;


(৪৩) মনোযোগ সহকারে সেবা প্রার্থীগণের বক্তব্য শ্রবণ এবং দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধান করা;


(৪৪) সরকারি স্বার্থ রক্ষার্থে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ;


(৪৫) দপ্তরের নিরাপত্তা বৃদ্ধিকল্পে নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ;


(৪৬) প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ভূমি অফিসমূহকে দালালমুক্তকরণ;


(৪৭) দপ্তরের প্রবেশপথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সম্ভব হলে দপ্তরের সামনে ফুলের বাগান তৈরি করা;


(৪৮) দপ্তরের চৌহদ্দিতে অবস্থিত পুকুরে (যদি থাকে) স্ব-উদ্যোগে মাছ চাষের ব্যবস্থাকরণ;


(৪৯) পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে বৃক্ষরোপণ এবং রোপিত গাছের পরিচর্যাকরণ;


(৫০) দপ্তরকে আক্ষরিক অর্থে ধূমপান মুক্তকরণ; এবং


(৫১) উমেদার প্রথা রহিতকরণ।"

Comments

Popular posts from this blog

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

একটি ভিত্তিহীন গুজব উড়িয়ে দেওয়া: বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ফ্রেঞ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়নি৷

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন