"পারিবারিক আদালতে মামলা করার নিয়ম ২০২৩। স্বামী স্ত্রীর সমস্যা সমাধানের জন্য কোথায় যাবেন?

"পারিবারিক আদালতে মামলা করার নিয়ম ২০২৩। স্বামী স্ত্রীর সমস্যা সমাধানের জন্য কোথায় যাবেন?








পারিবারিক বা স্বামী স্ত্রীর সমস্যা নিয়ে পুলিশ বা থানায় যাবে না –
পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে সমাধান পেতে পারেন –
পারিবারিক আদালতে মামলা করার নিয়ম ২০২৩


পারিবারিক আদালত পরিচালনা করবেন কে? যতগুলি সহকারী জজ আদালত রহিয়াছে ততগুলি পারিবারিক আদালত থাকিবে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সকল সহকারী জজ আদালতই পারিবারিক আদালত বলিয়া গণ্য হইবে। সকল সহকারী জজ পারিবারিক আদালতের বিচারক হইবেন।


পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার বা কি ধরনের মামলা গ্রহণ করে? The Muslim Family Laws Ordinance, 1961 (VIII of 1961)-এর বিধানাবলি সাপেক্ষে, পারিবারিক আদালতে নিম্নোক্ত সকল বা যে-কোনো বিষয় সম্পর্কিত বা উহা হইতে উদ্ভূত যে-কোনো মোকদ্দমা গ্রহণ, বিচার এবং নিস্পত্তি করিবার নিরঙ্কুশ এখতিয়ার থাকিবে, যথাঃ-


(ক) বিবাহবিচ্ছেদ;
(খ) দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার;
(গ) দেনমোহর;
(ঘ) ভরণপোষণ;
(ঙ) শিশু-সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান;

পারিবারিক বা স্বামী স্ত্রীর ঝামেলা হলে কি পুলিশের কাছে যাবেন? না কোন ভাবেই পুলিশের কাছে যাবেন না। কারণ থানা বা পুলিশ এ ধরনের সমস্যার সমাধান বা বিচার করার এখতিয়ার রাখে না। পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ আপনাকে ফিরিয়ে দিবে না। পুলিশ বা থানা অভিযোগ গ্রহণ করবেন এবং হয়তো বাদী বিবাদীকে মিলে থাকার পরামর্শ দিবে। তাতে সমস্যার কোন সমাধান হবে না।


তাহলে কি কোর্টে মামলা করবেন? না। 
প্রথমত পারিবারিক সমস্যা নিয়ে ধুম করে কোর্টে গেলে কোর্ট মামলা নিবে। উকিলও হয়তো ধরবেন উকিল আপনার কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে মামলা পরিচালনা করবে তাতে জটিলতা বাড়বে। এসব সমস্যা সমাধান হতে খুব দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হবে। তাই দ্রুত সমাধান পেতে পারিবারিক আদালতের স্বরণাপন্য হতে হবে। পারিবারিক আদালতে কোন উকিল ছাড়াই আপনি সমস্যা সমাধানের জন্য আরজি পেশ করতে পারবেন।


স্বামী স্ত্রীর ঝামেলা মিটাতে কোর্ট নয়, পারিবারিক আদালত উপযুক্ত স্থান / শিশু সন্তানের অভিভাকত্ব নিয়ে একটি মামলার স্ট্যাডি নিচের লিংক হতে দেখে নিন
যে কারণে আরজি খারিজ বা বাতিল হইতে পারে–
ক) যেই ক্ষেত্রে উপধারা (৭)-এর আবশ্যকতা-অনুসারে তফসিল ও দলিলের তালিকাসহ আরজির অবিকল নকলসমূহ উহার সহিত সংযুক্ত না থাকে;
(খ) যেই ক্ষেত্রে ধারা ৭(৫)-অনুযায়ী সমন জারির খরচ এবং নোটিশের জন্য ডাক খরচ পরিশোধিত না হয়;
(গ) যে-ক্ষেত্রে আরজি উপস্থাপনের সময় ধারা ২২ অনুযায়ী প্রদেয় ফি পরিশোধ করা না হয় । (৯) যে-ক্ষেত্রে আরজি দাখিল করিবার সময় বাদী কর্তৃক কোনো দলিল আদালতে দাখিল করিবার প্রয়োজন ছিলো অথবা আরজির সহিত সংযুক্ত করিবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করিবার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তদনুযায়ী উহা দাখিল বা অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই, সে-ক্ষেত্রে মামলার শুনানির সময় আদালতের অনুমতি ব্যতীত উহা তাহার পক্ষে সাক্ষ্য হিসাবে গৃহীত হইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, আদালত কোনো ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র-ব্যতীত এইরূপ অনুমতি প্রদান করিবেন না ।




পারিবারিক আদালতে কিভাবে মামলা করতে হয়? আর্জি বা আবেদন করতে হয় কি? হ্যাঁ সহকারী জজ বরাবর আর্জি বা আবেদন পেশ করতে হয়।
এই আইনের অধীন প্রত্যেকটি মামলা সেই পারিবারিক আদালতে আরজি দাখিলের মাধ্যমে দায়ের করিতে হইবে যাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমানার মধ্যে-
মামলার কারণ সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে উদ্ভূত হইয়াছে; অথবা
পক্ষগণ একত্রে বসবাস করেন বা সর্বশেষ বসবাস করিয়াছিলেন; তবে শর্ত থাকে যে, বিবাহবিচ্ছেদ, দেনমোহর বা ভরণপোষণের মামলায় সেই আদালতেরও এখতিয়ার থাকিবে, যাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমানার মধ্যে স্ত্রী সাধারণত বসবাস করেন।
যে-ক্ষেত্রে কোনো এখতিয়ারবিহীন আদালতে কোনো আরজি দাখিল করা হয় সে-ক্ষেত্রে,-
(ক) আরজিটি যে-আদালতে দাখিল করা উচিত ছিল সে-আদালতে দাখিলের জন্য ফেরত দেওয়া হইবে;
(খ) আরজি ফেরত প্রদানকারী আদালত ইহার নিকট আরজি দাখিলের ও ফেরত প্রদানের তারিখ, দাখিলকারীর নাম ও ফেরত প্রদানের কারণসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ আরজির উপর লিপিবদ্ধ করিবেন।
আরজিতে বিরোধ সম্পর্কিত সকল অত্যাবশ্যকীয় তথ্যের উল্লেখ থাকিবে এবং উহার একটি তফসিল থাকিবে, যাহাতে আরজির সমর্থনে উপস্থিত করিতে ইচ্ছুক সাক্ষীগণের নাম ও ঠিকানার উল্লেখ থাকিবে; তবে শর্ত থাকে যে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে, বাদী পরবর্তী যে কোন সময়, যে কোন সাক্ষী মান্য করিতে পারিবে।
আরজিতে কি কি বিষয় উল্লেখ থাকতে হবে?
আরজিতে কিছু বিষয়সমূহের উল্লেখ থাকিবে, যেমন-
(ক) যে-আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা হইবে উহার নাম;
(খ) বাদীর নাম, বর্ণনা ও বাসস্থান;
(গ) বিবাদীর নাম, বর্ণনা ও বাসস্থান;
(ঘ) বাদী বা বিবাদী নাবালক বা অপ্রকৃতিস্থ হইলে সেই সম্পর্কে একটি বিবরণী;
(ঙ) মামলার কারণ সংক্রান্ত তথ্যাবলী এবং তাহা যে-স্থানে ও তারিখে উদ্ভূত হইয়াছে;
(চ) আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কিত তথ্যাবলি;
(ছ) বাদীর প্রার্থিত প্রতিকার ।
যেই ক্ষেত্রে বাদী তাহার দাবির সমর্থনে সাক্ষ্য হিসাবে তাহার দখলে বা ক্ষমতাধীনে আছে এইরূপ কোনো দলিলের উপর নির্ভর করেন, সে-ক্ষেত্রে তিনি আরজি দাখিলের সময় আদালতে উহা উপস্থাপন করিবেন এবং একই সময় উক্ত দলিল বা উহার কোন অবিকল বা ফটোস্ট্যাট কপি আরজির সহিত নথিভুক্ত করিবার জন্য দাখিল করিবেন এবং উক্তরূপ দলিল আরজির সহিত সংযুক্ত করিবার তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করিবেন।


এ আদালতে কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা হয়?
আরজি দাখিলের পর পারিবারিক আদালত বিবাদীর নামে সমন জারি করবে। বিবাদীর উপস্থিতির জন্য নির্ধারিত তারিখে, বাদী ও বিবাদী পারিবারিক আদালতে হাজির হইবেন এবং বিবাদী তাহার আত্নপক্ষ সমর্থনে লিখিত জবাব দাখিল করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, বিবাদী উপযুক্ত কারণ প্রদর্শনপূর্বক প্রার্থনা করিলে আদালত তাহার আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত জবাব দাখিলের জন্য অনূর্ধ্ব একুশ দিনের মধ্যে অপর একটি তারিখ ধার্য করিতে পারিবে। লিখিত জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থনে উপস্থিত করিতে ইচ্ছুক সাক্ষীগণের নাম ও ঠিকানা সংবলিত একটি তফসিল সন্নিবেশিত থাকিবে তবে শর্ত থাকে যে, বিবাদী আদালতের অনুমতিক্রমে, পরবর্তী যে-কোনো পর্যায়ে সাক্ষী আহ্বান করিতে পারিবেন, যদি আদালত মনে করেন যে, ন্যায় বিচারের স্বার্থে অনুরূপ সাক্ষ্য প্রয়োজন। এভাবে দ্রুত ফলাফলে পৌছাবে।


পারিবারিক আদালত আইন ২০২১ : ডাউনলোড"


Comments

Popular posts from this blog

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

একটি ভিত্তিহীন গুজব উড়িয়ে দেওয়া: বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ফ্রেঞ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়নি৷

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন