Skip to main content

মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার রেডিও বিবৃতি ও কিছু কথা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন:

মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার রেডিও বিবৃতি ও কিছু কথা
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন:





২৫শে মার্চ ১৯৭১। রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী সর্বশক্তি নিয়ে অতর্কিতভাবে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আক্রান্ত মানুষের আর্তচিৎকার, কামানের আওয়াজ, রকেট লাঞ্চার আর ট্রেসার বুলেটের আগুনের ঝলকানিতে সমগ্র ঢাকা নগরী পরিণত হলো নরকের বিভীষিকা। এমনই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু গোপন ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে বলধা গার্ডেন থেকে অথবা মগবাজার বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা ইথারে, টেলিগ্রাফ, টেলিগ্রামে তিন/চারটি চ্যানেলে প্রচারিত হতে থাকলো।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হলো। শুরু হলো স্বাধীনতার জন্য মরণপন লড়াই। ২৬শে মার্চ ভোরের আলো ফুটবার আগেই সারাদেশে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। মরণপন লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল বীর বাঙালি। জয়দেবপুরে মেজর কে এম শফিউল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেজর খালেদ মোশাররফ এবং মেজর শাফায়াত জামিল, কুষ্টিয়ায় মেজর ওসমান। চট্টগ্রামে মেজর রফিক। টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকী। কিন্ত কোথায় চট্টগ্রামের সবচেয়ে সিনিয়র বাঙালি অফিসার ব্রিগেডিয়ার মজুমদার? কোথায় কর্নেল এম আর চৌধুরী? কোথায় ৮ম বেঙ্গলের মেজর জিয়া? পরে খবর পাওয়া গেল ব্রিগেডিয়ার ধৃত, কর্নেল মৃত আর মেজর যাচ্ছিলেন তার কমান্ডিং অফিসার পাঞ্জাবি জানজুয়ার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস করতে।

আগ্রাবাদ বারেক বিল্ডিংয়ের মোড়ে রাস্তার ব্যারিকেড সারানোর জন্য থামতে হয় তাকে। তার অধীনস্ত সৈন্যদের রাস্তা পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে সিগারেট টানতে টানতে ফুটপাতে পায়চারি করছিলেন মেজর জিয়া। এমন সময় একটি সামরিক জিপ দ্রুত বেগে এগিয়ে এসে তার সামনে কড়া ব্রেক কষে থামল। জিপ থেকে লাফ দিয়ে নেমে আসলেন তরুণ ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান। হন্তদন্ত এবং উত্তেজিতভাবে জিয়াকে পাকিস্তানি আক্রমণের খবর দিলেন। জিয়া বললেন, ‘উই রিভল্ট’।

বন্দরে না গিয়ে ফিরে গেলেন ষোলশহর ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টারে। জিয়ার সঙ্গী সৈনিকেরা তার নির্দেশ পালন করল। ষোলশহর সেনাছাউনিটি মূলত ছিল আর্মির ট্রানজিট ক্যাম্প। অষ্টম বেঙ্গলকে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি করা হয়েছে। এর অগ্রগামী একটি কোম্পানি আগের সপ্তাহে করাচি চলে যায়। জিয়াসহ দ্বিতীয় অংশটি (দুই কোম্পানি) জাহাজে ওঠার অপেক্ষায় ছিল। কিন্ত ইতোমধ্যে ২৫শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যাই হোক, ষোলশহর ব্যাটলিয়ন সদর দপ্তরে পৌঁছানোর সাথে সাথে জিয়াকে দেখে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আকাশে ফায়ার করে বাঙালি অফিসার জেসিও, এনসিও এবং সৈনিকরা তাকে বিদ্রোহের জন্য চাপ দিতে থাকে।

জিয়া ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টারে পৌঁছানোর আগেই ক্যাপ্টেন অলি, শমশের মবিন ও অন্যান্য অফিসাররা কমান্ডিং অফিসার জানজুয়াসহ সকল পাকিস্তানি সৈনিক ও অফিসারকে বন্দি করে ফেলে। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসলেন জিয়া। এমন সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে কয়েকজন আহত সৈনিক এবং অফিসার এসে ক্যান্টনমেন্টে ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের অতর্কিত আক্রমণে ঘুমন্ত অবস্থায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম আর চৌধুরীসহ বহু বাঙালি সৈনিক এবং অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের কথা জানাল। জিয়াকে তারা অনুরোধ করল, ক্যান্টনমেন্টের পেছনে গিয়ে ৮ম বেঙ্গল যদি ফায়ার করে তাহলে ৩১ বেলুচ রেজিমেন্ট ডিফেন্সে চলে যাবে। এই সুযোগে বাঙালি সৈনিক এবং অফিসাররা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্ত জিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন। ফলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে পাঞ্জাবি ও বেলুচদের হাতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মতো এক লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো বাঙালি সৈনিক-অফিসার ও তাদের পরিবার।

জিয়া ভোরের দিকে তার আটশ বাঙালি সৈন্য নিয়ে রেললাইন ধরে পটিয়ার দিকে রওয়ানা হলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে রামগড় সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য। পথিমধ্যে পটিয়া স্কুলে জিয়া তার সৈনিক এবং অফিসারদের নিয়ে বিশ্রামে বসেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম শহরে মরণপন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মেজর রফিক, তার অনুগত ইপিআরের সৈন্যদের নিয়ে। তারই সিগন্যাল পেয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে টেকনাফ থেকে দুই ব্যাটেলিয়ন রি-ইনফোর্সমেন্টের ইপিআর সৈন্য যাচ্ছিল ওই সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে। জিয়া পটিয়া সড়কে তাদের থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “কোথায় যাচ্ছো তোমরা? সৈন্যরা বলল, “শহরে স্যার, মেজর রফিক কল করেছে।” জিয়া তখন বললেন, “শহরে কেউ নাই। মেজর রফিক রামগড়ের দিকে রিট্রিট করেছে। তোমারা এখানে আমার সাথে থাকো।” অথচ, তখনো মেজর রফিক চট্টগ্রাম শহর রক্ষায় মরণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। রি-ইনফোর্সমেন্টের অভাবে তিনদিন পর চট্টগ্রাম শহরের পতন হয়।

কালুরঘাট সে সময়ে চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে। সেখানে রয়েছে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের ট্রান্সমিটার ভবন। সেই ট্রান্সমিটার কেন্দ্রটিকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে’ পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচার চালাচ্ছিলেন বেলাল মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৪০ বছর ধরে জার্মান প্রবাসী), ফটিকছড়ি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কাসেম সন্দীপ (এখানে উল্লেখ্য ,যে কাসেম সন্দীপর কণ্ঠই সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে ইথারে ভেসে আসে, তিনিই স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রথম শব্দসৈনিক) এবং সেই সময়কার চট্টগ্রাম বেতারের কয়েকজন তরুণ কর্মী। ২৬শে মার্চ সকাল ১১টার দিকে এই বেতার কেন্দ্র থেকে চট্রগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান জাতির জনকের স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচার করেন। ভবনটি অরক্ষিত থাকায় বেতারের কর্মীরা ভবনটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তারা পথচারীদের কাছ থেকে খবর পেলেন যে, পটিয়া স্কুলে কয়েকশ বাঙালি সৈন্য অবস্থান নিয়েছে। বেলাল আর ফারুক জিপ নিয়ে রওয়ানা হলেনপটিয়া স্কুলের দিকে। তারা গিয়ে দেখলেন শত শত সেনা গিজগিজ করছে সেখানে । বেলাল একজন হাবিলদার মেজরকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনাদের কমান্ডিং অফিসার কে?

হাবিলদার বলল, মেজর জিয়া।

ফারুক জিজ্ঞেস করল, তিনি কোথায়?

হাবিলদার ইশারা করে দেখিয়ে বলল, তিনি ভেতরে আছেন।

ফারুক এবং বেলাল ভেতরে গিয়ে দেখলেন স্কুলের একটি রুমে কয়েকজন অফিসার চা পান করছেন আর আলাপ করছেন। বেলাল জিজ্ঞেস করলেন মেজর জিয়া কে? জিয়া বললেন, আমি, বলুন কী সাহায্য করতে পারি?

বেলাল বললেন, মেজর সাহেব কালুরঘাট ট্রান্সমিটারটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে, কিন্ত সেটা অরক্ষিত, যদি কিছু সৈন্য পাঠান প্রহরার জন্য তাহলে ভালো হয়।

জিয়া সোৎসাহে বললেন, আমি আপনাদের অনুষ্ঠান শুনেছি, চলেন আমিও যাব।

দুই ট্রাক সৈন্য নিয়ে জিয়া, বেলাল, ফারুক, লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন ও ক্যাপ্টেন হারুনসহ কালুরঘাট রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে জনতার জটলা দেখলেই জিয়া জিপ থামিয়ে উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা দিতে থাকেন। কালুরঘাট পৌঁছে পরিখা খনন করে ভবনের চারিদিকে সৈন্য প্রহরা বসিয়ে অবশেষে ভেতরে গিয়ে বসলেন জিয়া। সেখানে চা খেতে খেতে আলাপের এক পর্যায়ে বেলাল মোহাম্মদ জিয়াকে বললেন, মেজর সাহেব, বাঙালি সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে আপনি কিছু বলবেন কি? জিয়া সাথে সাথে সোৎসাহে বলল, তাই তো! কী বলা যায় বলুন তো? তখন বেলাল মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ঘণ্টাখানেক মুসাবিদা করে জিয়ার সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতাটি তৈরি করলেন। তারপর রেডিওতে কাসেম সন্দীপি ও ফারুক ঘোষণা করতে লাগলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই মেজর জিয়া জাতির উদ্দেশ্য একটি বিশেষ ঘোষণা দেবেন।

তখন ২৭শে মার্চ বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট। ইতোমধ্যে যুদ্ধ শুরুর ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশ তখন মরণপন সংগ্রামে লিপ্ত। কালুরঘাট ব্রিজের নিচ দিয়ে ভেসে যাচ্ছিল মানুষের লাশ। তখনই ইথারে ভেসে আসল মেজর জিয়ার কণ্ঠ, “আই মেজর জিয়া। হিয়ার বাই, আই প্রোক্লেইম ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ অন বিহাফ অব আওয়ার সুপ্রিম কমান্ডার অ্যন্ড গ্রেট লিডার শেখ মুজিবুর রহমান”। এবং জয় বাংলা বলে শেষ করেন। মুহূর্তেই ‘জিয়া’ ইতিহাসের পাদপ্রদীপের আলোয় আলোকিত হলেন। মুজিবুর রহমান সৃষ্ট বাঙালির শ্রেষ্ঠ ইতিহাসের পাতায় জিয়ার নাম লেখা হয়ে গেল। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জিয়ার এই ঘোষণায় প্রতিধ্বনিত হয়েছিল ৭ই মার্চের জাতির জনকের দৃপ্ত ঘোষণা ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে’। জনতার মাঝে সৃষ্টি করেছিল উদ্দীপনা ও সাহস। জিয়ার ওই ভাষণে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সৈনিক, অফিসার ও প্রতিরোধ যোদ্ধারা বুঝতে পারল যে, তারা একা নয়। সারাদেশে স্বাধীনতার লড়াই শুরু হয়ে গেছে। জিয়ার এই রেডিও বিবৃতির ফলে তাকে মূল্যায়ন করা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর ‘প্রথম মুখপাত্র’ হিসেবে। কিন্ত কোনো প্রকারেই স্বাধীনতার ঘোষক নন তিনি। কারণ–

১. পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিদ্রোহী এক অপরিচিত ও অখ্যাত জুনিয়র অফিসার কীভাবে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন?

২. জিয়া ওই পথ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে ভারত অভিমুখে রিট্রিট (পশ্চাদপসারণ) করছিলেন। তিনি কালুরঘাটের কাছাকাছি ছিলেন বলে কাকাতালীয়ভাবে বেতারে ভাষণ দেওয়ার মতো সুযোগ পেয়েছিলেন।

৩. তিনি সেখানে না থাকলে হয়তো অন্য কোনও অফিসার বঙ্গবন্ধুর মুখপাত্র হিসাবে ভাষণটি দিতেন।

৪. যদি রেডিওতে একেবারে কেউ কিছু বলতে না পারত তাহলে ৭ই মার্চের ভাষণের দিকনির্দেশিত পথে ২৫শে মার্চে স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল সেটি কি মাঝ পথে থেমে যেত? কখনোই না।

৫. ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে জিয়ার সাথে সরাসরি এবং প্রত্যক্ষভাবে যারা উপস্থিত ছিলেন সেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এবং বেতারের ওই সময়কার কর্মকর্তা বেলাল মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ ফারক, কাসেম সন্দীপরা বলেন একরকম কথা আর সেই সময় জিয়ার সাথে ন্যূনতম পরিচয়ও ছিল না এমন বিএনপি নেতারা বলেন অন্য কথা। এমনকি ওই সময়ে চট্টগ্রামে উপস্থিত সামরিক কর্মকর্তা মীর শওকত, শমসের মবিন, হারুন, সুবেদ আলী ভুঁইয়া, রফিকুল ইসলামও কখনো বলেন নাই যে, জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। বরং এদের মধ্যে অনেকেই বিএনপির এই দাবির বিরোধিতা করেছেন। জিয়া নিজে কস্মিনকালেও নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি।

৬. যদি এককভাবে জিয়া সেটা করত তাহলে সেটা হতো ‘মিউটিনি’ বা বিদ্রোহ এবং সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত হতো। তখন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের বিদেশি মিত্ররা আমাদের বৈধ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশ্ব জনমতকে সহজেই বিভ্রান্ত করতে পারত। তারা প্রচার করত যে, আমরা যখন রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য মুজিবের সাথে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম, তখনই ভারতীয় ইন্ধনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু জুনিয়র বাঙালি অফিসার বিদ্রোহ করে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী দেশের অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে কিছু ক্যাজুয়ালটি হয়েছে, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দূঃখিত। এই পরিস্থিতিতে ভারতও আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে আমাদের সাহায্য করতে পারত না। যদি করত তাহলে পাকিস্তানি জান্তা এবং তার মিত্ররা ভারতের বিরুদ্ধে এই বলে অপপ্রচার করত যে, ভারত পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় ও ট্রেনিং দিচ্ছে। ইস্যুটা তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে যেত। তখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত। লাখ লাখ বাঙালি তখন আজকের রোহিঙ্গাদের মতো বা ভারতে আশ্রিত তিব্বতী শরণার্থীদের মতো ভাসমান ক্লেশ, নিগৃহীত রিফিউজিতে পরিণত হতো।

তাই আজকে মেজর জিয়ার অর্বাচীন সন্তান ও অজ্ঞ স্ত্রীসহ ইতিহাস বিকৃতি করে যারা জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার উজ্জ্বল অবদানকে বিতর্কিত করছেন, তারা মূলত মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অবদানকেই ম্লান করার চেষ্টা করছেন। তাদের মনে রাখা উচিত ‘রাম ছাড়া রামায়ন হয় না’। রাম না থাকলে লক্ষণ, ভরত কেউ থাকে না। তেমনি মুজিব ছাড়া বাংলার ইতিহাস হয় না। মুজিব না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ থাকে না আর মুক্তিযুদ্ধ না থাকলে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সারির নেতা জিয়া কেন, কেউই থাকে না।

লেখকঃ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জার্মান শাখার সাবেক সভাপতি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কৃতজ্ঞতাঃ bdnews24.com


Comments

Popular posts from this blog

How to Protect Your Intellectual Property Rights in Bangladesh

Banking Litigation and Dispute Resolution