Skip to main content

বিশ্বাসঘাতক জিয়ার ইতিকথা


ইন রিসিভ মুড দিয়ে অডিও শুনতে পারবেন এবং 32% জুম করে ফুলবি দেখুন



বিশ্বাসঘাতক জিয়ার ইতিকথা

জিয়ার বহুরূপ-

হয়ত নিরপেক্ষতার মুখোশ পরা কিংবা সস্তা জনপ্রিয়তার কারণে অনেকে জিয়াকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর মিথ্যার ফুলঝরি রটিয়ে থাকে।কিন্তু মেজর জিয়া কি রকম ব্যাক্তি সেটি জানতে হলে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে,জানতে হবে কীভাবে ছলচাতুরী করে সবাইকে বিভ্রান্ত করেছিল। তথাকথিত অনেক বুদ্ধিজীবী জিয়ার পক্ষে মাঝে মাঝে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে,কিন্তু প্রকৃত সত্য তারা সদর্পে যেভাবে লুকিয়ে রাখেন তা ভাবতেই লজ্জা লাগে।এরা হয়ত কেউ জিয়ার আমলে সুবিধাবাদী ছিল।অথবা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে পালিয়ে ছিল,অথবা বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে ভোল পাল্টে জিয়ার পা চেটে ভাল থেকেছিল,জেল জুলুম থেকে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু ওরা বোধহয় জানে না সত্যকে দুনিয়ার কোন শক্তি লুকিয়ে রাখতে পারেনা।


অনেকদিন যাবৎ বাংলাদেশে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছে ছিল।তাই লেখাটিকে তিন ভাগে ভাগ করেছি।একাত্তরে জিয়ার ভূমিকা , বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার ভূমিকা,জিয়ার শাসনামল…একটু সময় নিয়ে পড়ুন, জিয়া সমন্ধে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন।
ইতিহাসের পাতায় দেখুন জিয়ার অপকর্ম কীভাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছিল মাত্র দুই বছরের ব্যাবধানে।


একাত্তরে জিয়ার ভূমিকা্ঃ
জিয়া ১৯৫৮ সাল থেকে ৬৪ সাল পর্যন্ত আইউব খানের ইন্টিলিজেন্স অর্থাৎ আইএসআই এ কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশে।জিয়ার কাজ ছিল দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কর্মকাণ্ড পাকিস্তানী সামরিক জান্তার কাছে পাচার করা।জিয়ার দেওয়া তথ্যের কারণেই সে সময় বঙ্গবন্ধু , তাজউদ্দিন, মণি সিংহ,ভাসানী সহ অন্যান্য নেতারা অনেকবার গ্রেপ্তার হয় আইয়ুব খানের আমলে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে জিয়া বাংলাদেশে আবার ফিরে আসেন পাকিস্তান থেকে ইয়াহিয়ার আদেশে।


অনেকে বলে থাকেন জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন,কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়ার কি অবদান ছিল তা জিজ্ঞেস করলে কেউ বলতে পারে না,বলতে পারলেও সঠিক তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনা।


২৫ মার্চ জিয়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাকিস্তান থেকে আসা পাকিস্তানী অস্ত্র খালাসের দায়িত্বে ছিলেন।


জিয়ার অধীনে থাকা সেনারা পাকিস্তানীদের গণহত্যার কথা ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক শুনে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেয়।জিয়া বিদ্রোহ না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও সহকর্মীদের বিদ্রোহের পক্ষে কঠোর অবস্থান দেখে মত পাল্টাতে বাধ্য হন। যখন জিয়া নিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয় সে তখনই পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ পাকিস্তানীদের সিদ্ধান্ত ছিল বাঙালি সেনা দেখা মাত্র হত্যা করা।


জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সমন্ধে শক্ত ভাষ্য পাওয়া যায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর রফিক থেকে-


“২৫ শে মার্চ মেজর জিয়া চট্টগ্রাম বন্দরে এম ভি সােয়াত থেকে অস্ত্রসস্ত্র গােলাবারুদ নামানাের কাজে সাহায্য ও তদারকি করার জন্য রওনা হন। পথিমধ্যে জানতে পারেন পাকিস্তান আর্মি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে বহু সেনা অফিসার হত্যা করেছে। তখন জিয়াউর রহমান সটকে পড়েন। জিয়াউর রহমান যখন চট্টগ্রাম হতে পটিয়ার দিকে রিট্রিট করেন সে সময় মেজর রফিক বিপদ ও ঝুঁকি সত্ত্বেও বীরত্বের সঙ্গে চট্টগ্রামে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।২৪ মার্চ মেজর রফিক জিয়াকে বারবার অনুরোধ করেন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দিতে।কিন্তু জিয়া উল্টো বলেন সদ্ভাব বজায় রাখতে পাকিস্তানীদের সাথে।জিয়ার এই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে ২৫ শে মার্চ রাতে অনেক বাঙালি সেনা নির্মমভাবে শহিদ হয় পাকিস্তানীদের হাতে।অথচ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বাঙালি সৈন্য ছিল ১৫০০ ,পাকিস্তানী সৈন্য ছিল মাত্র ৩০০। যদি মেজর রফিকের কথা শুনতেন জিয়া শত শত বাঙালি সেনা এবং অফিসার রক্ষা পেত,এবং চটটগ্রাম শুরু থেকেই দখলে থাকতো।কিন্তু জিয়া নিজের স্বার্থে অটল ছিলেন।


অথচ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সবাই জিয়ার সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করেছিল জিয়ার সম্মতির জন্য ১৭ মার্চ থেকে,কিন্তু জিয়া তাদের কথা শোনেন নি,উল্টো তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সেনা কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত বজায় রেখে ছিলেন।


যখন কালুর ঘাটে যুদ্ধ হচ্ছে জিয়াউর রহমান তখন কক্সবাজারের ট্রেজারী হতে মাসমাহিনার প্রাপ্ত টাকার হিসাব মেলাতে ব্যস্ত।সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ এর সুযোগ থাকা সত্বেও জিয়া অংশ নেয়নি সেসময়। যখন কক্সবাজারে যুদ্ধ জিয়া তখন রামগড়ে, যখন রামগড়ে যুদ্ধ তখন জিয়াউর রহমান ভারতীয় সীমান্ত অভ্যন্তরে নির্বিঘ্নে অবস্থান নিয়েছেন। সেজন্য যুদ্ধের সময় জিয়াকে অনেকেই ‘মেজর রিট্রিট’ হিসেবে সম্বােধন করতেন।


মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধের আগে বাঙালি সেনা কিংবা সেনা কর্মকর্তা উভয়ের সহচর্য এড়িয়ে চলতেন,এমনকি প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইতেন না বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জিয়ার আওতাধীন সৈন্য সিরু বাঙালির ভাষ্যমতে ২৩ মার্চের চট্টগ্রামের উত্তপ্ত ও নাজুক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের স্বাধীনতা প্রিয়, জাগরণ মুখের বাঙালিকে খতম করার পাক সেনারা হত্যা যজ্ঞ শুরু করেছিল আগেই। এ জন্য বাঙালিরা চট্টগ্রামের রাস্তায় নাানভাবে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিলেন, যাতে পাকিস্তানিরা চলাচল করতে না পারে। ‘২৩ মার্চের সেরকম একটি বিস্ফোরণোন্মুখ আমরা কজন ২০/২৫ বছর বয়সী টগবগে তরুণ ১৬ শহর ২নং রেইল গেটে বায়েজিদ বোস্তামী রোডের ওপর একটি ৮ বগি সম্পন্ন মালবাহী রেলওয়াগন দিয়ে ব্লুক করে পাহারা দিচ্ছিলাম।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি সামরিক জিপে এসে জিয়াউর রহমান হুকুম দিলেন, ‘রেলক্রসিং থেকে ওয়াগন সরাও। আমাকে রাস্তার ওদিকে যেতে হবে।’


সিরু বাঙালিসহ উপস্থিত সংগ্রামী জনগণ জিয়ার কথায় কর্ণপাত করেনি। প্রতিবাদ করতে থাকে। জিয়া বললেন, ‘চুপ কর। কথা বাড়িও না। রেল ব্যারিকেড সরাও। আমাদের যেতে দাও।’
জিয়ার পাকিস্তানি স্টাইলের হম্বিতম্বি, ভাবসাব দেখে জনগণের মাথায় খুন চড়ে যায়। জনগণ বললো, ‘রেল ব্যারিকেড সরানো হবে না।’ জিয়া চিৎকার করে বললেন, ‘জানো আমি কে? এ পর্যন্ত বলে তিনি তার পেছনে দাঁড়ানো সৈন্য দুজনের দিকে পলকের জন্য চাইলেন। তারপর বললেন, আমার নাম মেজর জিয়াউর রহমান। আমি ১৬ শহর সিডিএ মার্কেটে অবস্থিত ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড, সরকারি কাজে আমাকে আমার স্টেশন হেডকোয়ার্টারে যেতে হবে। ব্যারিকেড হটাও।’


জনগণ তার হুংকারে কোনোভাবেই বিচলিত হলো না। তারপর রূঢ় ভাষায় তিনি বললেন, ‘তোমরা অপরিণামদর্শী যুবক। এর খেসারত তোমাদের দিতে হবে। তৈরি থেকো।’ এই বলে পিছু হটলেন কালোচশমা পরিহিত জিয়াউর রহমান।


জিয়া সমন্ধে সিরু বাঙালি আরো বলেন ২৬ মার্চ তিনি ৮ম ইস্ট বেঙ্গল ক্যাম্প ছেড়ে প্রাণের ভয়ে অধীন সৈনিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে বোয়ালখালি থানার কদুরখীল বড়য়া পাহাড় প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।


এরপর ৩০ মার্চ যখন কালুরঘাট বেতারের ওপর পাক আর্মি প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করলো তখন জিয়া ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ভারতে যাবার নাম করে রাম গড়ে পলায়ন করেন।
জিয়ার মিথ্যাচারকে সিরু বাঙালি উন্মোচন করে দিয়েছিলেন।‘যেমন তিনি সাক্ষাৎকারের এক জায়গায় দাবি করেছেন যে, ২১ মার্চ চট্টগ্রাম সেনা নিবাসে এক ভোজ সভায় পাকিস্তানের এক জেনারেলের মুখে বাঙালিদের বিরুদ্ধে একশনে যাবার নির্দেশ দিতে তিনি শুনেছেন। অথচ ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে যে, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম সেনা নিবাসে পাকিস্তানের কোনো জেনারেল আসেননি এবং কোনো ভোজসভার আয়োজনও হয়নি।’ সিরু বাঙালি তার বইতে ২১ মার্চের দিনলিপি তুলে দিয়েছেন শমসের মবিন চৌধুরী ও অন্যদের। তাতে জিয়ার তথ্য অকাট্যভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের নতুন পাড়ায় ৮ম ইস্ট বেঙ্গল ক্যাম্প থেকে মেজর জিয়া সতীর্থ ইপিআর সেনাদের ফেলে রেখে রাত ২টায় পলায়ন করেছিলেন। কোনো প্রতিরোধ করেননি। আবার সতীর্থদেরও বলেননি তোমরা নিরাপদ সরে যাও। এর ফলে ইপিআর নিহত হয় আড়াই হাজার। জিয়া রেজিমেন্ট কমান্ডার হিসেবে এ দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেনা।


পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও জিয়ার নামে রহস্য জনক কারণে কোন মামলা দায়ের করেনি পাকিস্তানীরা। খালেদ,মেজর জলিল মোশারফ,শাফায়াত জামিল,কর্নেল তাহের সহ অনেক সেক্টর কমান্ডার ৭১ এ সম্মুখ সমরে অংশ নিলেও জিয়া কখনো কোনদিন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়নি।জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোনদিন যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র হাতে নামেনি। জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে সিলেটে বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের ১৬৭ জন অকুতোভয় বীর সেনাদের নির্মম মৃত্যুর মুখে পতিত করা। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি সেনা বা যোদ্ধাদের স্ট্র্যাটেজি ছিল অতর্কিত হামলা , কারণ মুক্তিবাহিনী অতটা প্রশিক্ষিত ছিল না, অস্ত্রশস্ত্র অপ্রতুল ছিল, পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে লড়লে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভ্যবনা বেশি ছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধের হাইকমান্ডের নির্দেশ ছিল অতর্কিতে গেরিলা হামলা করা ।কিন্তু জিয়া হাইকমান্ডের কারো সাথে কোন আলোচনা করা ছাড়াই পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন,এবং বেঙ্গল রেজিমেন্ট শোচনীয় পরাজয়ের শিকার হয়,১৬৭ জন সেনা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন জিয়ার কৃতিত্বে। উল্লেখ্য জিয়া সে যুদ্ধে ও সম্মুখ সমরে দেখা দেননি।এটাই জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় অবদান আর বেঙ্গল রেজিমেন্টের সবচেয়ে বড় ক্ষতি মুক্তিযুদ্ধে। এ ঘটনার পর জিয়াকে এজিএম ওসমানী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন।মেজর জিয়া তার নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করে ভারতের ভেতরে যদিও কর্নেল তাহের বা খালেদ মোশাররফ সহ অন্য সেকটর কমান্ডাররা রণাঙ্গনে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন কিন্তু জিয়া কখনো সম্মুখ সমরে অংশ নেননি ।
উল্লেখ্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানী সেনাদের হাতে বন্দি ছিলেন,জিয়ার সাথে পাকিস্তানি সেনাদের চিঠি চালাচালি হত।এছাড়া জিয়া পাকিস্তানী বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় আইএসআই এর গোয়েন্দা ছিলেন। সিলেটে এ ঘটনার পর জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নিয়ে খোদ মুক্তিযোদ্ধাদের মনেই প্রশ্ন উঠে!
জেনারেল ওসমানীর ভাষ্যমতে
” ওসমানী মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ভারতে থাকাকালীন সময়ে (১৯৭১ সালে) ব্রিগেডিয়ার পান্ডের দফতরে টাকা গুণবার অভিযােগ এনে বলেন
“জিয়া পূর্ব হতেই টাকা “গােনায় অভ্যস্ত।ওসমানী আরো বলেন
” জিয়া নিজেই স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলদেশ সরকারের নিকট হতে বেতন ভাতা নিয়েছেন অন্য দিকে ঐ সময়েই ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের নিকট হতেও টাকা গুনেছেন”
জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের নামের অদ্যাক্ষরে ফোর্স খুলে সেকটর কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধাদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরায়। ফলশ্রুতিতে মেজর শফিউল নিজের নামে এস ফোর্স,খালেদ মোশাররফ নিজের নামে কে ফোর্স করেন। জিয়ার এই পদক্ষেপের কারণে ২,৩,৮,১১ নম্বর সেক্টর অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।জিয়া দুই নম্বর সেক্টরে দুই মাসের জন্য সেক্টর কমান্ডার ছিল,কিন্তু সেময় প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধ ভালভাবে শুরু হয়নি, কয়েক জায়গায় বিচ্ছিন্ন ভাবে যুদ্ধ শুরু হলেও জিয়া রামগড় এ অবস্থান করতেন কখনো সম্মুখ সমরে অংশ নেননি।ফলে জুন মাসে চালু হওয়া দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয় নি জিয়াকে ।


পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর তৎকালীন কর্ণেল বেগ ১৯৭১ এর ২৯ মে লেখা চিঠিতে জিয়াকে লিখে-
Major Ziaur Rahman,
Pak Army, Dacca
We all happy with your job. We must say good job. you will get new job soon.Don’t worrie about your family. Your wife and kids are fineyou have to be more carefull about major Jalil.
Col. Baig Pak Army
May 29. 1971
 


বেগের লিক
জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন কিনা তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখা উচিত। পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়ার দ্বিচারিতা মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্মিত করেছিল।


কারণ উদ্দেশ্যপ্রণেদিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সবচেয়ে বড় ক্ষতি জিয়া করে আদতে পাকিস্তানীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার ভূমিকা
বঙ্গবন্ধু হত্যায় সবচেয়ে বড় কলকাঠি নেড়েছে জিয়া।বলা যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।বঙ্গবন্ধু খুনী রশীদের বিবিসি সাক্ষাৎকারে ফারুক-রশীদ দাবি করে- যে বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে ১৫ অগাস্টের বহু পূর্বেই জিয়াকে তারা অবহিত করে। ফারুক জানায়, “২০ শে মার্চ ১৯৭৫ সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটের দিকে সে জিয়ার বাসায় জিয়ার সাথে দেখা করে এবং তাকে বলে- The country required a change।উত্তরে জিয়া বলেন, “Yes, yes, lets go outside and talk”। তখন জিয়া ফারুককে নিয়ে বাইরে বাড়ির লনে যায়। সেখানে ফারুক পুনরায় বলে, “We have to have a change. We, the junior officers, have already worked it out. We want your support and leadership”। জিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট। জিয়া বলে, “If you want to do something, you junior officers should do it yourself …”


রশিদ ১৫ আগস্টের আগে জিয়ার সাথে অসংখ্য বার দেখা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন বিভিন্ন সময়ে।
জিয়ার সাথে ফারুক-রশিদের সাক্ষাৎ এবং সামরিক ক্যু নিয়ে আলোচনা যে আরও অনেকবার হয়েছে তার প্রমাণ মেলে রশীদের স্ত্রী জোবায়দা রশীদের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, “একদিন রাতে ফারুক জিয়ার বাসা থেকে ফিরে আমার স্বামীকে (রশীদ) জানায় যে, সরকার পরিবর্তন হলে জিয়া প্রেসিডেন্ট হতে চায়। শুধু তাই নয়। জিয়া আরও বলে- If it is a success then come to me. If it is a failure then do not involve me.”

বঙ্গবন্ধু খুন হবার পরে কর্নেল শাফায়াত জামিল যখন জিয়ার কাছে যান তখন জিয়া জিয়া একদিকে শেভ করছেন একদিকে শেভ করে নাই। স্লিপিং স্যুটে দৌড়ে আসলেন। শাফায়াতকে জিজ্ঞেস করেন, ‘শাফায়াত কী হয়েছে?’ শাফায়াত বললেন, ‘অ্যাপারেন্টলি দুই ব্যাটালিয়ন স্টেজড্ এ ক্যু। বাইরে কী হয়েছে এখনো আমরা কিছু জানি না। রেডিওতে অ্যানাউন্সমেন্ট শুনতেছি প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন।’ উত্তরে জিয়া বলে,
“If the President is no longer there, then the Vice President is there. Go to your headquarters and wait there”।


মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ তার এক বিশ্লেষণে বলেন জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ,তিনি পর্দার অন্তরালে মূল লোক ছিলেন । পরবর্তীতে এই জিয়াই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সবচেয়ে লাভবান হন , নিজে হয়ে যান সেনাপ্রধান ,আস্তে আস্তে পুরো ক্ষমতা নিজ হাতে কুক্ষিগত করে”


বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি মাজেদ যার কিনা সম্প্রতি ফাঁসির রায় কার্যকর তার ভাষায়


‘জিয়াউর রহমানের সমর্থন আছে না হলে উনি আগ বাড়িয়ে এসব মোটিভেশন কেন করবেন? উনার সমর্থন ছিল তা পরিষ্কার কথা। রেগুলার ওরাই ডিরেক্ট করতো সবকিছু, হুকুম চালাতো ওখান থেকে। ওরা যা চাইতো জিয়াউর রহমান তাই করে দিতেন। এ ধরনের অবস্থা ছিল তখন। এতেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এরা সব ভিআইপি অবস্থায় ছিল। প্রেসিডেন্টের গেট দিয়ে এরা প্রবেশ করতো। প্রেসিডেন্টের পাশের রুমে স্যুইট মোশতাক সাহেব যে রুমে থাকতেন, সেই পাশে ওরা থাকতো। ওখানেই ওদের সাথে জিয়াউর রহমান সাহেবের কথোপকথন হতো।’
খুনী মজিদের সাক্ষাৎকার
পরে জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিল,বিভিন্ন দূতাবাসে কূটনৈতিক হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন রশিদ,ফারুক,ডালিম দের।


জিয়ার শাসনামল
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে জিয়া শুধু ক্ষান্ত হয়নি , পরবর্তীতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে নির্মূল করতে জিয়া অগ্রণী ভুমিকা পালন করে।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সনের প্রথমার্ধেই ৬২,০০০ (বাষট্টি) হাজার রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের কারাগারে আটক রাখে, যার মধ্যে অধিকাংশই ছিলাে আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ শ্রমিক লীগের নেতা ও কর্মীবৃন্দ,জাসদকে পুরো নির্মূল করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের তিন বছর স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ১ লক্ষ ১৩ হাজার নেতা কর্মীকে পর্যাক্রমিক গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রাখে।২৫ নির্মম অত্যাচার অনেককে জেলখানায় হত্যা করা হয়। প্রায় তিন হাজার জোয়ান-অফিসারদের ফাঁসী দেয়।এরমধ্যে ১৯৭৭ সালেই কর্নেল তাহের সহ ১১৪৩ জন সামরিক কর্মকর্তাকে বিনা বিচারে ফাঁসি দেয়া হয়।
জিয়ার আমলে বাকস্বাধীনতা বলতে কোন শব্দ ছিলনা।
১৯৭৫ সালে যেখানে সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল ২০০ এর অধিক জিয়ার আমলে তা দু অংকে নেমে আসে,দেশে ইংরেজি পত্রিকা ছিল মাত্র দুইটি তাও সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে প্রকাশ পেতে হত। জিয়ার ক্ষমতার স্বার্থে আঘাত এমন কোন কথা প্রকাশ করতে পারতোনা কোন সংবাদপত্র।সামরিক ফরমানে ঘােষণা জিয়া ঘোষণা করে কথাবার্তা, আকার ইংগিত, চিহ্ন দ্বারা সামরিক শাসক গােষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু করলে বা বললে তার শাস্তি ৫ বছর কারাদন্ড হতে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত। জাতির জনক টুঙ্গিপাড়ার কবরে, সেখানে চব্বিশ ঘন্টা সশস্ত্র পাহারা। কেউ গেলে ধমকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। না মানলে গ্রেফতার করে। মােনাজাত করতে গিয়ে গ্রেফতার হন হাজী গােলাম মােরশেদ। বঙ্গবন্ধুর কবরে এই পাহারা ১৯৮০ সন পর্যন্ত বলবৎ ছিল।৯ ঢাকার ৩২নং বাড়ি ছিলাে তালাবদ্ধ। বাড়ির সামনে যেতে দেয়া হত না। বাড়ির সামনে দাঁড়ালে ধমক খেতে হতাে। কি নির্মম নিষ্ঠুর ছিল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন!


বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালীন পাকিস্তানের কাছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছিলেন , পরে বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালীন ক্ষতিপূরণ নেওয়ার জন্য অনেক অগ্রগতি ও করেছিলেন কিন্তু জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেন,এমনকি ৪-৫ বছর ক্ষমতায় থেকে জিয়া কখনো পাকিস্তানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেনি।উল্টো জিয়া ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেন।
এইতো গেল জিয়ার দুঃশাসনের সামান্য নমুনা সাধারণ মানুষ ও জিয়ার অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি, দিনের পর দিন যেভাবে শোষন করেছে মানুষকে জিয়া তা অবর্ণনীয়। নমুনা দেখুন –
৭৩-৭৪ সনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ১৪ লাক্ষ ডলার। ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে তা পৌছে ৩৩৬ কোটি ১৫ লক্ষ ডলারে অর্থাৎ বেড়েছে ৭ গুণ। সরকারী পরিসংখ্যাণে দেখা যায় খাদ্য সংকটের সময়েও (৭৪-৭৫) বছরে গড়ে প্রতিটি মানুষ খাদ্য পেয়ে ৩৫৬ পাউন্ড, কিন্তু ৭৮-৭৯ সনে পেয়েছে ৩২৯ পাউন্ড। ১৯৭৫-৭৬ সনে খাদ্য আমদানী করতে হয়েছে ১৪.৪০ টন ৭৯৮০ সনে ২৭.৭৮ লক্ষ টন।
১৯৭৫-৭৬ সালে সাধারণ মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৮০৭ গ্রাম। কিন্তু ১৯৮১-৮২ সালে এই ভােগের পরিমাণ মাত্র ৭৬৪ গ্রামে এসে দাঁড়িয়েছিল ।
জিয়াকে অনেকে সৎ শাসক বলে থাকেন ,কিন্তু জিয়ার রাষ্ট্রীয় অর্থের নিদারুণ অপচয় আপনাকে বিস্মিত করবে।
জিয়া ক্ষমতা থাকাকালীন বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩শ‘ দিনই হেলিকপ্টার ভ্রমণ করতেন। হেলিকপ্টার তার নিত্য দিনের সাথী ছিল।একটি গরীব দেশের রাষ্ট্রপতির এরকম জাকজমকপূর্ন জীবন ২০২০ সালে এসে ও কেউ কল্পনা করতে পারবেনা।জিয়া ক্ষমতা থাকাকালিন ৫০টি দেশ সফর করেন। কোন কোন দেশ সফর করেন ২/৩ বার। জিয়ার বিদেশ সফরে কম করে হলেও ২০ কোটি ডলারের বেশী খরচ হয়েছে সেসময়। জিয়ার সফরের পূর্বে একটা অগ্রগামী দল বিদেশ যেতাে। তাদের কাজ ছিলাে সেদেশের পত্রিকায় বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের ছবি ও গুণকীর্তন প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা। ১৯৮০ সালের জুন মাসে জিয়ার লন্ডন সফরকালে গার্ডিয়ান ও টাইমস পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা বের করার জন্য খরচ হয় ৩০ হাজার পাউণ্ড। ‘৮১ সালের গােড়ার দিকে পশ্চিম জার্মানী সফরকালে পত্রিকা ও টিভিতে ছবি প্রদর্শনের জন্য ব্যয় হয় ৫০ হাজার পাউণ্ড। ‘৮০ সালে নয়াদিল্লী সফরের সময় টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্থান টাইমস কাগজে বিশেষ সংখ্যা বের করার জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার পাউণ্ড। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর কালে প্রায় ২০ লক্ষ ডলার ব্যয় হয়। বিদেশ সফর শেষে জিয়ার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে দ্রব্যসামগ্রী কিনে আসতেন। ‘৭৯ সালে ভিসিআর আনার দায়ে প্রেসিডেন্টের মুখ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা হাতে নাতে ধরা পরে। তাছাড়া বিদেশে তাদের কারাে কারাে হােটেলে থাকাকালীন কেলেংকারীর কথাও প্রকাশ হয়ে পড়ে।
 

বাকশালের বৈঠকে উপস্থিত জিয়া ও খালেদা জিয়া।


জিয়া স্বাধীনতার পর স্বাধীন বাংলাদেশে সকল রাজাকারদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। সর্বপ্রথম ক্যান্টনমেন্টে জাগপা নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে তার অধৈধ ক্ষমতাকে সুসংহত করতে।এরপর ১৯৮০ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে তাও কিন্তু ক্যান্টনমেন্টে!! জিয়ার মন্ত্রিসভায় থাকা ২৮ মন্ত্রীর ২৭ জনই ছিল বড় বড় ঋণখেলাপি ,এরা আবার বিএনপির সবচেয়ে বড় ডোনার ও ছিল,তাই কখনো এদের দুর্নীতির দায়ে বিচার হয়নি।এটাই ছিল জিয়ার সততার নমুনা!


জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় ,সকল রাজাকার,স্বাধীনতা বিরোধী জামাত, মুসলিম লীগ, স্বাধীনতা বিরোধী বাম ও চীন পন্থী নেতারা জাগপায় এসে ভিড়ে বিএনপিতে সকল পাকিস্তান ফেরত রাজাকারদের অভিবাসন কেন্দ্র ছিল বিএনপি। রাজকার ও বঙ্গবন্ধু খুনীদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পুনর্বাসন ও জিয়ার হাত ধরেই। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি শুরু খুনী জিয়ার হাত ধরেই। বাহাত্তরের সংবিধানের লঙ্ঘন করে স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রণেতা এই অবৈধ স্বৈরাচারী শাসক জিয়া।পৃথিবীর ইতিহসে সর্বপ্রথম হ্যাঁ না ভোট চালু করে নিজের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করেছিলেন অস্ত্রের জোরে। সে নির্বাচনে মিনিটে ৪০ টি ভোট পড়ার রেকর্ড হয় যা সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত একমাত্র নজির। লোকদেখানো গনতন্ত্র চালু করে জিয়া একই সাথে দেশের প্রেসিডেন্ট,সামরিক শাসক সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন। কি সুন্দর গণতন্ত্র বাহ।


উপ-প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ উপ নেতা থাকা অবস্থায় ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ জিয়াউর রহমানের স্বৈরতন্ত্রের নীতির বিরোধিতা করে ‘পার্টির অভ্যন্তরে গণতন্ত্র দিতে হবে’ বলায় জিয়া মওদুদ আহমেদকে মন্ত্রীত্ব ও নেতৃত্ব থেকে বহিস্কার করেন। হ্যা এটাই জিয়ার গনতন্ত্রের নমুনা।
বাকশালে জিয়া যোগ দিতে চেয়েছিল।বঙ্গবন্ধু জিয়াকে যেন বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখে এজন্য নানা জায়গায় তদবির ও করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জিয়ার কপটতা সম্ভবত ধরতে পেরেছিলেন তাই হয়তববা বাকশালে রাখেননি জিয়াকে। ১৯৭৪ এর মাঝামঝি বঙ্গবন্ধু জিয়ার অতিরিক্ত তদবিরে বিরক্ত হয়ে রেগে গিয়ে বলেন
“জিয়া অত্যান্ত উচ্চবিলাসী।সে অনেককে দিয়ে বাকশালের সদস্য হওয়ার জন্য আমার কাছে সুপারিশ করেছে।সে ধৈর্য ধরতে জানেনা।”

বাকশালের সদস্য হওয়ার জন্য জিয়ার সুপারিশ


অথচ জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাকশালের নামে সমানে মিথ্যাচার চালিয়েছে।
জিয়ার দ্বিমুখী নীতি সত্যিই সবসময় বিস্ময় জাগানিয়া।
 

বাকশালের বৈঠকে জিয়া ,সাল ১৯৭৫।

বাকশালের বৈঠকে জিয়া ,সাল ১৯৭৫।
জিয়া যুবদল গঠন করে দেশের যুবসমাজকে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত করে, এবং দেশের শিক্ষাঙ্গন এ অস্ত্র ও লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি চালু করে ছাত্রদলকে অঢেল অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে।সেভেন মার্ডারের খুনের আসামী শফিউল আলম প্রধান কে জিয়াই মুক্তি দিয়ে দেন বিএনপি করার মুচলেকা নিয়ে।এরকম হাজার হাজার ডাকাত – খুনিকে জিয়া মুক্ত করে দেয় যুবদল কিংবা বিএনপি করার মুচলেকা নিয়ে।


জিয়ার আমলে ১৯৮০ সালে ইত্তেফাকের এক সংবাদ থেকে জানা যায় ছাত্রদলের ক্যাডারদের ব্যাংক ডাকাতির কথা,তারা প্রকাশ্য দিবালােকে তারা ১৫ লাখ টাকা ব্যাংক ডাকাতি করে বিএনপি দুর্গ সলিমুল্লাহ ছাত্রবাসে আশ্রয় গ্রহণ করে। পুলিশ সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করে। ছাত্রদলের এসব দুষ্কৃতিকারীদের নাম নূরুল কবীর মিন্টু, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আনােয়ার হােসেন খােকন, ইশতেয়ার রহমান ফালু। গত ৯ই জুন, ‘৮০ তেজগাঁও শিল্প এলাকায় টিসিবির গুদামে সােনালী ব্যাংকের বুথ থেকে একদল সশস্ত্র যুবক ১৫ লক্ষ টাকা ছিনতাই করে। পুলিশ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী জানা যায় ঐদিন পৌনে দুটোর দিকে ৫/৬ জন যুবক একটি চকলেট রঙের জীপে চড়ে (ঢাকা চ-৩২৫) তেজগাঁও টিসিবি গুদামে সােনালী ব্যাংক শাখায় পৌছায়। ব্যাংকের বুথে টাকা গণনার সময় ৩ জন যুবক স্টেনগান, রাইফেল ও পিস্তল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে এবং গার্ডদের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের নিরস্ত্র করে। ব্যাংক কর্মচারীদের হাত থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। একই সঙ্গে তারা গার্ডের রাইফেল ও স্টিল আলমারী হতে একটি বন্দুকও সঙ্গে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের হলে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশী শুরু করে এবং ১২ই জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ হলে পুলিশ অভিযান চালায় ,৭৯নং কক্ষ হতে চারজনকে আটক করে এবং তাদের নিকট ২৬ রাউন্ড গুলিসহ ৩টি রিভলবার এবং ২৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ও কালাে কাপড়ের তৈরী ৪টি মুখােশ উদ্ধার করে। ৭৯নং কক্ষটি বিএনপি ছাত্রদল নেতার। বিএনপি-র ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট হয় তারজন্য পুরাে ঘটনাটাই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস চলছে দাবি করে ছাত্রদল নেতারা। বিএনপি’র ছাত্রনেতারা ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করেছে এদের ছেড়ে দেয়া হবে। তবে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে সিংহভাগ টাকা বিএনপি’র ফান্ডে দিতে হবে।


জিয়া সর্বপ্রথম এদেশে ব্লু ফিল্মের হলে হলে চালু করার অনুমতি দিয়েছিল দেশের সংস্কৃতি ধ্বংস হওয়ার ক্ষেত্রে জিয়ার অবদান অনেক।এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে মদ বিক্রির বৈধতা দিয়েছিল জিয়া । অর্থাৎ দেশের যুবসমাজ কে ধ্বংস করতে কোন কিছু করা বাদ রাখেনি জিয়া। ১৯৮০ সালে বের হওয়া পুলিশের তথ্য অনুযায়ী জিয়ার আমলে হত্যা খুন ,সন্ত্রাস , ধর্ষন ও লুটপাট ১৯৭৪-৭৫ সাল থেকে ৭-৮ গুন বেড়ে গেছে।স্বাধীন বাংলাদেশ আইন শৃঙ্খলা একেবারে নাজুক অবস্থায় ছিল ততকালে।
ব্যারিস্টার মওদুদ জিয়ার শাসন নিয়ে ১৯৮৪ সালে বলেন-
“খেলাপী ঋণের যে বড় অংশ এখন মাথা ব্যাথার কারণ, তার সিংহভাগ জিয়ার আমলে দেয়া‘। তিনি আরাে বলেছেন, “এমনকি সার্কিট হাউসে বসে দরখাস্তের উপর লিখে দেয়া হতাে ঋণ দিন।” জিয়ার আমলে শিল্পায়নের নামে দলীয় লােক দেখে দেখে আর্থিক সুবিধা দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মূল্যের মাত্র ১০% শতাংশ মূল্যে পানির দামে রাষ্ট্রায়াত্তকৃত শিল্প দলীয় সমর্থকদের মধ্যে বেচে দেয়। সেই বিক্রির কিস্তির টাকা এখনাে আদায় হয়নি, যার পরিমাণ ২৪০ কোটি টাকা। ঋণ নিয়েছে, কিন্তু কেউ শিল্প গড়েনি। ঋণের টাকায় বাড়ি, গাড়ি, ভােগ বিলাস, বিদেশে পুজিপাচার, অন্যখাতে বিনিয়ােগ করেছে। বিএনপি আমলে ‘শিল্পপতি‘ নামে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা গােষ্ঠীর মধ্যে বেশীর ভাগই ‘ফ্রড‘। এটা শাসকদের প্রশ্রয়েই হয়েছে”
জিয়ার ভন্ডামি
১৯৭৭ সালে ১১৪৩ জন সামরিক কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড আড়াল করার জন্য হত্যাকাণ্ডের পরদিন সংবিধানে জিয়া সুন্দর করে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ঘোষনা দিয়ে ও সংবিধানে বিসমিল্লাহ যুক্ত করে এতগুলো সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নির্বিচারে হত্যা করাকে বৈধ করে ফেললেন রাষ্ট্র ধর্মের আড়ালে।কি সুন্দর কৌশল ধর্মের আড়ালে অপকর্ম লুকানো।মানুষ বুঝলো জিয়ার অপকৌশল।! আইয়ুব খানের পর পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাক্তি হিসেবে নিজেকে নিজে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিল জিয়া।ইনডেমনিটি আইন করে ৭৫ থেকে ৮১ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সকল অপকর্ম ও অবৈধ হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছিলেন।পৃথিবীর কোন দেশে সেদেশের সূর্যসন্তানদের এভাবে গনহত্যার নজির নেই,জিয়া সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ এদেশে মুক্তিযোদ্ধা গণহত্যাকারী ।
জিয়ার বাঙালিত্ব নিয়েও প্রশ্ন জাগে স্বাভাবিক,একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয় ।প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমান সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রতিচিন্তা’-য় ২০১৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সংখ্যায় ৬৮ পাতার এক সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল-
“জিয়াউর রহমান কিন্তু বাংলা লিখতে-পড়তে জানতেন না। তিনি শেষের দিকে যা কিছুতে সই করতেন, সেটা করতেন শুধু বাংলায় ‘জিয়া’ লিখে। আপনারা যদি তাঁর স্বাক্ষর করা ফাইল ইত্যাদি দেখেন, তাহলে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করবেন। করাচিতে তিনি লেখাপড়া শিখেছেন। যৎসামান্য বাংলা বলতে পারতেন। বাংলা লেখাপড়া কিছু জানতেন না। প্রথম দিকে তিনি বাংলায় যে বক্তৃতা দিতেন সেগুলো উর্দুতে লিখতেন। লিখে তাপরপর তা-ই দেখে দেখে ভাষণ দিতেন।”
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা,খালেদ মোশাররফ হত্যা,কর্নেল তাহের হত্যা,হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তা হত্যা, চাঞ্চল্যকর হ্যাঁ না ভোট, দুঃশাসনের জন্য কপটতা ,ভন্ডামির বরপুত্র হওয়ার জন্য মেজর জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে, থাকবে চিরকাল।জিয়ার ঐতিহাসিক পৈশাচিক অপকর্মের জন্য ইতিহাস জিয়াকে ক্ষমা করেনি।খন্দকার মোশতাক যদি এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেঈমান হয় জিয়া মোশতাক থেকে কোন অংশে কম ছিল না… শুধু বাংলাদেশের ইতিহাস না পৃথিবীর ইতিহাসে ও বিশ্বাসঘাতকদের,খুনীদের বরপুত্র হয়ে রইবে জিয়া আজীবন।

  • তথ্যসূত্র :
  • *জেনারেল জিয়ার রাজত্ব – অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
  • *বিএনপির সময় সময় – মহিউদ্দিন আহমদ
  • *লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে – মেজর রফিকুল ইসলাম
  • *আমার দেখা একাত্তর -আনিসুজ্জামান
  • *একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর – কর্নেল শাফায়াত জামিল
  • *Anthony Mascarenhas, Bangladesh– A Legacy of Blood
  • *যুদ্ধের ময়দান থেকে জিয়ার পলায়ন – সিরু বাঙালি
  • *ক্রাচের কর্নেল – শাহাদুজ্জামান সেলিম
  • *জোছনা ও জননীর গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

Comments

Popular posts from this blog

How to Protect Your Intellectual Property Rights in Bangladesh

Banking Litigation and Dispute Resolution