রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নারী জাগরণে যার চিন্তা চেতনা ছিল সমসাময়িক অবস্থার চেয়ে অনেক অগ্রসর (ঠাকুর বাড়ির মেয়েরা)

 






রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার চিন্তা চেতনা ছিল সমসাময়িক অবস্থার চেয়ে অনেক অগ্রসর

রবি ঠাকুরের মা

 

নারীবাদীর দৃষ্টি কোন  থেকে দেখলে সে সময়ের সমাজ ব্যবস্থায় নারীর করুন অবস্থা দেখা যায়। আর এই অবস্থা থেকে জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়িও ব্যতিক্রম ছিল না। 

 

রবি ঠাকুরের অন্দর মহলের নারীরা কঠোর পর্দা প্রথার মধ্যে থাকতেন। তারা ছিলেন  অবরুদ্ধ। রেনেসার আগে ঠাকুর পরিবারে পর্দা প্রথা এতোই কঠিন ছিল যে তখন নারীরা  গঙ্গা স্নান করতে যেতে পারতেন না। যেতে পারতেন বছরে একবার মাত্র। সেটা ছিল মেয়েরা পালকির মধ্যে বসে থাকতো এবং  তা বিরাট এক চাদর দিয়ে ঢাকা থাকতো,  যাকে বলা হতো ‘প্যালেনকুইন’। চাদর  দিয়ে ঢাকা অবস্থাতেই মেয়েদেরকে পানিতে ডুবানো হতো। পালকিতে বসানো অবস্থাতে তারা স্নান সারতেন।    

 

 

এই সেই অন্দর মহল ,যেখানে ঠাকুর বাড়ির নারীরা অবরুদ্ধ থাকতেন

 

 

 

অপ্রাপ্ত বয়েসে  বিবাহ

 

জ্ঞানদা নন্দিনী মাত্র সাত বছর বয়সে এবং কাদম্বরী দেবী মাত্র নয় বছর বয়েসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রবীন্দ্র  ঠাকুরের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী মাত্র নয় বছরে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেন দিগম্বর দেবী এবং সারদা দেবী মাত্র ছয় বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে আসেন।  বাল্য বিবাহ স্বাভাবিক ছিল।

 

 বিছানা থেকে আতুর  ঘর 

 

অধিক  সংখ্যক বাচ্চা জন্ম দান এবং তা করতে গিয়ে শয্যাশায়ী হওয়া । সারদা   দেবী ১৫ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। এই জন্য তিনি সব সময় অসুস্থই থাকতেন এই জন্য রবি ঠাকুর তাঁর মার আদর এবং সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন।  অর্থাৎ মেয়েদের জীবন ছিল ‘বিছানা থেকে আতুর ঘর’ ।

 

রবি ঠাকুরও তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে ছিলেন অপ্রাপ্ত বয়সে। এক জনের দশ এবং আর একজন এগারো। রবি ঠাকুরকে মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে যৌতুক পর্যন্ত দিতে হয়েছে ।   

 

এগুলো তো ছিলই আরও ছিল অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এনে তাকে অবজ্ঞা করা। যা হয়েছিল কাদম্বরীর প্রতি।  বিয়ের সময়ে দেয়া গয়না নারীদের একান্ত নিজস্ব সম্পত্তি হলেও তা অনেক সময় নিজের থাকতো না। যেমন জ্ঞানদা  নন্দিনীর গয়না শাশুড়ি সারদা  দেবী নিয়ে নড়িয়েছিলেন কারন তাঁর সংগে সম্পর্ক ভালো ছিলনা এই জন্য। স্ত্রীর কর্তব্য করতে গিয়ে মৃণালিনী দেবীও তাঁর গয়না হস্তান্তর করেন। অবশ্য এটা ছিল ইচ্ছাকৃত। 

 

তবে এটা ঠিক এই পরিবেশ থেকে ঠাকুর বাড়ির মেয়েরা এবং বউরা ক্রমাগত ভাবে সরে আসতে পেরেছিলেন। এর কারন শিক্ষা । নারী শিক্ষার পেছনে ঠাকুর বাড়ির পুরুষদের অবদান এবং উৎসাহ অনেক ছিল। শুধু পুথিতে শিক্ষায় নয় মেয়েদের কে গান বাজনার চর্চা,  নাটকে অংশ গ্রহণ, ছবি আঁকা সব কিছুতেই পুরুষরা উৎসাহ দিতেন। মেয়েদের এবং বউ দের প্রাথমিক শিক্ষা এই গৃহেই দেয়া হতো। এটা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের জেনা রেশনের আমলেই বেশি। 

 

 

 

শুরু করা যাক রাম প্রিয়া দেবীর কথা দিয়ে 

 

ঠাকুর বাড়ির ছয় জেনা রেশন আগে  ১৭৮২ সালে প্রথম মহিলা হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে যান বিধবা হিসাবে সম্পত্তির ভাগ নেয়ার জন্য। 

 

দিগম্বরী দেবী ( ১৮০৩ -১৮৩০ ) 

 

তিনি ছিলেন দ্বারকানাথের ধর্ম পত্নী। দ্বারকানাথ হলেন রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের  দাদা। দ্বারকানাথ ছিলেন পশ্চিমের কালচারে অভ্যস্ত পুরুষ। ব্রহ্ম নেতাদের সাথে উপদেশ নিয়ে তিনি কুলধর্ম বজায় রাখতেন না। 

 

দিগম্বরী দেবী স্বামীর সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিবেন তা তিনি করেননি । তিনি ঠিক করলেন সেবা ছাড়া তার অন্য কিছুতে সঙ্গ দিবেন না এবং  তিনি নিজ ধর্ম বজায় রেখে সুদৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। 

 

দ্বারকানাথের সময় থেকেই নারীর সুদৃঢ় মনোভাবের দেখা গেছে। সেখান থেকেই শুরু হয়ে ছিল প্রাচ্য এবং পশ্চিমের চিন্তা চেতনা এবং কালচার গ্রহণের মিলন মেলা।  ‘ কালা পানি’ পার করে বিলাত যাওয়া সে সময় খারাপ চোখে দেখা হতো । দ্বারকানাথ তাই করে বিলাতের সাথে ব্যাবসা বাণিজ্য চালিয়েছিলেন।  

 

দুই ধারা গ্রহণের ফলে এই পরিবারে নাটক রচনা, অভিনয়, গান রচনা, গান গাওয়া, সুর দেয়া, কবিতা লেখা লেখি, দর্শনের চর্চা এবং  সমাজ সেবা সব কিছু গোড়ে উঠতে কোন বাধা সৃষ্টি হয়নি। 

 

আমার আলোচনার বিষয় ঠাকুর বাড়ির অন্দর মহলে নারীর সংস্কৃতি জীবনে প্রবেশ এবং তাদের জাগরণ। 

 

ঠাকুর বাড়িতে সে সময় অনেক পুরনো ধ্যান ধারনার প্রচলন চালু  ছিল। যেমন মেয়েরা বাইরে বেরুতে পারবে না। পুরুষের সামনে যাবেনা। লম্বা হাতার ব্লাউজ পরিধান সহ নিজেকে অবগুণ্ঠন করে রাখা  এবং পর্দার আড়ালে থাকতে হবে এবং শুধু মাত্র অন্দর মহল হলো তাদের স্থান। পুরুষের সেখানে প্রবেশ নিষেধ ছিল। কিন্তু সে সময়ে সেই পরিবারের মেয়েরা সেই সময়ে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতি চর্চার পথ বেছে নিয়ে ছিল। 

 

প্রথম দিকে এই বাড়ির মেয়েদের অনেক বাধার সমুক্ষ্মীন হতে হয়েছে এবং কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছিল এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে। এই বাড়ির মেয়ে এবং বউ দের এই পথে আসতে তাদেরকে নিজেদের পথ নিজেদের কেই তৈরি করে নিতে হয়েছে। 

 

তবে নারীর পড়াশুনার শেখার ক্ষেত্রে পুরুষের প্রথম থেকেই উৎসাহ ছিল। তাদের কাছ থেকে সব রকমের সহায়তা এ বাড়ির মেয়েরা পেয়েছিল। যা পরবর্তীতে গৌরবময় নারী জাগরণের পথ এই বাড়ি থেকেই  শুরু হতে পেরেছিল। 

 

 

 

আরেক গুণবতি নারী হলেন রবি ঠাকুরের বৌঠান  জ্ঞানোদানন্দিনী দেবী। তিনি এই পরিবারের নারীর চিন্তা চেতনাকে বদলাতে পেরেছিলেন। 

 

ঠাকুর বাড়ির মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিলেত যাত্রা করেছিলেন তিন সন্তান সহ। শুধু মাত্র নারী স্বাধীনতার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য এবং দেশে ফিরে সেই অভিজ্ঞতাকে নিপুণ ভাবে কাজে  লাগিয়েছিলেন।  বাইরে সাবলীল ভাবে বেরনর  জন্য মেয়েদেরকে দিয়েছিলেন একটি রুচি সম্পন্ন সাজ। 

 

তার আগে মেয়েরা শাড়ি পরতো পেটি কোট এবং ব্লাউজ ছাড়া এবং পরার ধরন ছিল এলোমেলো। যা পরে চলা ফেরা কঠিন ছিল। এগারো হাত লম্বা এক কাপড় জড়িয়ে পেচিয়ে কোন মতে শরীরে লেপটে থাকতো। 

 

বিলেত থেকে তিনি এনে ছিলেন নতুন ধরনের শাড়ি পরার ধরন। এই শাড়ি পরার ধরনটা ছিল সে সময়ের পার সিয়ান দের পোশাকের মতো।  সাথে পেটি কোট এবং  ব্লাউজ। যা তিনি নিয়ে এসে ছিলেন বিলাত থেকে।  

 

ক্যামেরার ব্যবহার ,ছবি তোলা,  বিকেলে বাইরে যাওয়া,  গভর্নর পার্টিতে যোগদান যা ছিল সে সময়ের নারীদের জন্য বিরাট সাহসের ব্যাপার, নাটকে যোগ দেয়া, লেখালেখি  এবং জন্মদিন পালন করার প্রথা তাঁর হাত দিয়ে শুরু হয়।

 

 

স্বর্ণ কুমারী দেবী , রবি ঠাকুরের বোন 

 

রবি ঠাকুরের মতোই আর এক তারকা স্বর্ণ কুমারী দেবী। তাঁর বিখ্যাত কাজ গুলো মধ্যে ছিল বিধবাদের জন্য ফ্রী স্কুল এবং বিধবা এবং অনাথের জন্য আবাস স্থল বানানো । বিধবাদের পুনরায় বিবাহ এবং অর্থনৈতিক ভাবে মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর অবদান অনেক এবং তাঁকেই পাইনদিয়া বলা যায়। 

 

লেখা পড়া শেষ করে তিনি লিখে ফেললেন আস্ত এক উপন্যাস।  তা ছাড়াও তিনি লিখেছেন কবিতা, উপন্যাস, গল্প, নাটক, গান, রম্য রচনা ভ্রমণ কাহিনী ,প্রবন্ধ, গিত নাট্য এবং স্কুল পাঠ্য। একজন মহিলার পক্ষে যা প্রায় সে সময় ছিল অসম্ভব। তাঁর লেখা উপন্যাস ‘কাহাকে’ দেশী বিদেশী সব পাঠককেই মুগ্ধ করেছিল। সাহিত্য ছাড়াও তিনি সমাজ সেবা এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপেও যোগ  দিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে সমাজ সেবাতে প্রবেশ করিয়ে ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম নারী হিসাবে ‘ জগ তারিণী’  পুরস্কার পেয়েছিলেন।

 

১৯৩২ সালে অমৃত বাজার পত্রিকায়  এক লেখাতে তাঁকে বলা হয়  ‘one of the most outstanding Bengali woman of the age who did her best for the amelioration of the condition of womanhood in Bengal’ 

 

 

সরলা দেবী

 

সরলা দেবী, যিনি স্বর্ণ কুমারী দেবীর কন্যা। মাত্র ১৩ বছর বয়েসে বেগুন থেকে এন্ট্রান্স পাশ এবং ১৭ বছর বয়েসে B.A পাশ করেন । গান গাইতেন এবং মিউজিকে ইংরেজি সুর আর বাংলা সুর মিশিয়ে নতুন ধারা এনে ছিলেন। নারী  শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৯১০ সালে ‘ভারত স্ত্রী মহা মণ্ডল’ স্থাপন করেন। চরমপন্থি রাজনীতিতে তিনি  যোগ দিয়েছিলেন যা  ঠাকুর বাড়ির কোন পুরুষ এই রাজনীতি করেনি। বিবেকানন্দ চেয়েছিলেন তিনি ভারতের নারী প্রতিনিধি হয়ে বিদেশ যাবেন, কিন্তু সরলা দেবী ঝড় তুলেছিলেন শুধু বাংলাতে নয় সারা ভারত বর্ষে । 

 

 

কাদম্বরী দেবী, রবি ঠাকুরের নতুন বৈঠান এবং তার সাহিত্য লেখার অনুপ্রেরণা দাত্রী 

 

ঠাকুর বাড়ির মেয়েদের মধ্যে আর এক অগ্রগামী নারী হলেন কাদম্বরী দেবী। তিনি স্বামীর সাথে ঘোড়াই চড়ে বেরিয়ে এসে ছিলেন। তা ছিল একটা দুঃসাহসের কাজ।  অবশ্য এর পেছনে ছিল তাঁর স্বামীর অনুপ্রেরণা। 

 

ঠাকুর বাড়ির পুরুষদের কি অবদান ছিল এই জাগরণের ব্যাপারে তা গবেষণা করলে দেখা যায় রবি ঠাকুরের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর সতীদাহ প্রথা অবলুপ্ত র পক্ষে ছিলেন এবং অব্যাপারে অনেক কাজ করে গেছেন।

 

রবি ঠাকুরের ভাই জ্যোতীরিন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীর ক্ষমতায় নের পক্ষে ছিলেন। সেই সময়ের তুলনায় তিনি বেশি এগিয়ে ছিলেন বলেই তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঘোড়ার চড়ে গড়ের মাঠে  যাওয়ার সাহস করেছিলেন। 

 

রবি ঠাকুরের অন্যান্য ভাই দের এতে অবদান 

 

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৪২-১৯৪৩) তিনি স্ত্রী আর সন্তান সহ সেই সময়ে বিলেত যাওয়ার সাহস দেখেছিলেন। 

 

হেমেন্দ্রলাল ঠাকুর (১৮৪৪-১৮৮৪) দেবেন্দ্রনাথরে তৃতীয় পুত্রের হাতে ছিল এই বাড়ির সমস্ত ছেলে  মেয়েদের  শিক্ষা দানের দায়িত্ব। 

 

জ্ঞানেন্দ্র নাথ ঠাকুর (১৮৪৭-১৮৮১)  এই বাড়ির মেয়েদের বাংলা নাটক দেখার অনুমতি দেন।

 

এই পরিবারের সব চেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ সালের পর রেনেসার সময় শুরু হয় । রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর নিজের মেয়েদের বিবাহিত জীবনে লাঞ্ছনা ,অবমাননা তো  দেখেছেন এমনকি মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে নিজেও অপ মানিত হয়েছিলেন ।

 

লেখনী দিয়ে লড়াই ( নারী জাগরণে )   

 

মেয়েদের কে সান্মানিক করার জন্য এবং তাদের ক্ষমতায় নের জন্য তিনি তাঁর কলমকে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে সবসময় মেয়েদের কে সামনের দিকে রেখেছিলেন। যুগের তুলনায় তিনি উচ্চ চিন্তাধারার মানুষ ছিলেন। তিনি তাঁর লেখনীতে জোরালো ভাবে মেয়েদেরকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। নারী পুরুষে সমতা বিধান, স্বাধীনতা দান, তাদের প্রতিভার বিচার করা, নারীকে সম্মান দিয়ে তাদের ক্ষমতা আদায় করার  জন্য তাঁর লেখনীর মাধ্যমে লড়াই করে গেছেন।  

 

তাঁর লেখা ‘নৌকা ডুবি’ তে দেখা যাচ্ছে হেমালিণী তার ভাইয়ের বন্ধু কে বিয়ে করতে নাকচ করে দেন,  কারন তার ইন্টারেস্ট আছে আর এক জনের সাথে। একই গল্পে দেখা যাচ্ছে কমলা যখন দেখতে পেল যে ব্যক্তির সাথে সে থাকতে যাচ্ছে সে তার স্বামী নয়। তৎক্ষনাৎ সে সেই বাড়ি ত্যাগ করে এবং সন্ধান করতে থাকে সেই পুরুষ কে যে তার প্রকৃত স্বামী। 

 

এই দুই চরিত্র দ্বারা তিনি দুটো নারী চরিত্র তুলে ধরেছেন যারা কিনা বেশ শক্তিশালী এবং নিজের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করে নিজের অধিকার বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। 

 

‘চোখের বালি’ গল্পে দেখা যায় বিধবাদের করুন অনুভূতি। বেশি বয়সের ব্যবধানের জন্য স্বামী আগেই মৃত্যুবরণ করেন। অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার জন্য বিনোদিনী একাকী ত্বে ভোগে। তার এখনো যৌবন আছে, যৌবনের চাহিদা আছে , জীবন সামনে পড়ে  আছে। কিন্তু সমাজের চাপে এবং নির্দেশে তাকে এই কঠিন জীবন মেনে চলতে হচ্ছে। কারন তখন বিধবা বিবাহের নিয়ম ছিলনা। বিধবা বিবাহকে খারাপ চোখে দেখা হতো। সমাজের অনুশাসন এবং নির্দেশ যা কিনা মানুষ দ্বারাই তৈরি আর তা কেবল নারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। আর যা কিনা এখন পর্যন্ত ট্যাব ই  হয়ে আছে । 

 

‘নষ্ট নীড়’  গল্পে দেখা যায় চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকা এক বন্দী নারী যার আছে অনেক প্রতিভা। কিন্তু তা দমন করে অন্য পথে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। তার দেবর অমল এর সান্নিধ্যে সে কিছুটা মুক্তি পেল। একটু আলোর মুখ দেখতে পেলেন। অমল তাকে শুধু মুক্তিই দিল না দিল অনেক সহযোগিতা । যার দ্বারা সে বদ্ধ ঘরের কষ্টকর জীবন থেকে বের হয়ে অমলের প্রেরণায় খবরের কাগজে লিখতে সাহস পেলেন। স্বামীর সাথে তর্কাতর্কি করে নিজ ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন এবং অমল পাশে থাকার জন্য এই শক্তি পেতে সাহায্য হয়। 

 

‘স্ত্রীর পত্র’ এর এক চরিত্রে দেখা যাচ্ছে এক নারী যে কিনা চার দেয়ালে বন্দী । যার বুদ্ধিমত্তা, প্রতিভা, প্রাশন, নিজে যা হতে চায় তা কিছু করতে পারছে না। তাঁর জ্ঞান ,প্রতিভা সবই চাপা পড়ে যাচ্ছে। তখন তিনি কবিতা লেখার মাধ্যমে নিজেকে আসল চরিত্রে কিছুটা হলেও আনতে পারছেন। 

 

‘শেষের কবিতা’ লাবণ্য চরিত্রে দেখা যাচ্ছে একজন অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট ছেলের সাথে প্রণয়ে আবদ্ধ হলেও লাবণ্য সাহস ভরে জিজ্ঞাসা করছে ভালোবাসালেই কি বিয়ে করতে হবে। ভালবাসার উদ্দেশই কি বিয়ে নামক একটা institution? 

 

বিয়ের নামে হিপক্র্যসি 

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখায় বলে গেছেন ভারতীয় রা হিপক্র্যাট , কারন বিয়ে সম্পর্কে তারা ধারনার দায় এটা এক মেয়ের জন্য অনেক সুখকর একটা জিনিস। কিন্তু তারা বুঝায় না এটার মাঝে কি ইনভল্ব আছে। এটা একটা মেয়ের জীবনকে কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে। মেয়েদের কে কত কষ্ট করতে হয় তা বলা হয়না। 

 

নিজ পরিবারের মেয়েদের জীবন দেখে তাকে এই মন্তব্য করতে হয়েছে। 

 

‘চারু লতা’ গল্পে তিনি কাদম্বরীর জীবন ফুটিয়ে তুলেছেন। কাদম্বরী হলেন তাঁর নতুন বৈঠান। জ্যোতীইন্দ্রনাথ  ঠাকুরের স্ত্রী ।

 

যিনি কিনা মাত্র ২৫  বছর বয়েসে আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করেন তার মৃত্যুর পেছনে কাহিনী অনেকটা কন্ত্রভারসিয়াল । স্বামীর নিস্প্রিওতা এবং  অন্য নারী আসক্তি,নিঃসন্তান থাকা এবং একাকী ত্ব তাকে মন কষ্টে ফেলেছিল। কিন্তু তাকে বুঝেছিল রবি ঠাকুর। যার কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন তাঁর সাহিত্য এবং কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা। 

 

আমরা জানি  সমাজের উন্নয়ন হয় চারটি পিলা রের উপর ভিত্তি করে।  সেগুলো হলো

 

১) Rational Thinking 2) Inter dependency 3) Cooperation 4) Active participation.

 

অর্থাৎ

 

 ১) যুক্তি পূর্ণ ভাবে চিন্তা ভাবনা 

 

২) একটা সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কারন পেছনে থাকে এবং সব করানই  একটার সংগে আর একটা শক্ত  ভাবে জড়িত। 

 

৩) সহযোগিতা অর্থাৎ একজন মেয়ে একলা এ গুতে পারেনা তার সাথে পুরুষ মানুষের সহযোগিতা দরকার। 

 

৪) সক্রিয় অংশ গ্রহণ   

 

শিক্ষা প্রভাব বিস্তার করে এই চারটি পিলা রের জন্য। তাই বলা যায় শিক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এই সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং উন্নতি করার জন্য এর ভূমিকা অপরিসীম । 

 

আর সব শেষে বলতে হয় ঠাকুর বাড়ির মেয়েদের জাগরণ ঘটেছিল তাঁদের এই শিক্ষার জন্য।  

 

চিত্রা দেব এর গবেষণা থেকে জানা যায় মেয়েরা যারা এই পরিবারে জন্ম নিয়েছেন বা বউ হিসেবে এসেছেন তারা শিক্ষা, সমাজ সেবা, গান, নৃত্য, ধর্ম এবং  দেশ সেবার নীতি নির্ধারণ এর সাথে জড়িত থেকে নিজেকে সম্ব্রিদ্ধ করেছেন এই ভাবেই এই বাড়ির মেয়েরা এগিয়ে আসতে পেরেছিল।  

 

তথ্য সূত্র 

 

’nEW WOMEN’ IN TAGORE’S SHORT STORIES ( THE ASIATIC VOLUME 4)

 

‘JORASANKO’ ARUNA CHAKRAVARTY

 

 DEV CHITRA ‘THAKUR BARIR ANDARMAHAL’

 

  

 

রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক কথা, আনন্দ পাবলিশার্স 

 

a LEGEND OF TAGORE WOMEN , PREMA NANDAKUMAR

 

tHE LIFE AND TIME OF WOMEN WHO INFLUENCED TAGOR, ARUNA CHAKRAVARTY 

 

ফটো ক্রেডিট উইকিপেডিয়া

 


Comments

Popular Posts