চেক ডিসঅনার মামলা কখন ও কিভাবে করবেন?
ধরুন, আপনি এক ব্যক্তির কাছে দুই লাখ টাকা পান। সেই টাকা পরিশোধের জন্য তিনি দুই লাখ টাকার একটি চেক দিলেন। আপনি চেকটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিলেন। কিন্তু ব্যাংক
‘অপর্যাপ্ত ফান্ড’
(টাকা নেই)
বা অন্য কোন করান দেখিয়ে চেক
ডিসঅনার করল অথ্যাৎ আপনাকে টাকাটি দিল না। সোজা কথায় আপনি ৬ মাসের
(চেকের তারিখ থেকে)
মধ্যে আপনি টাকা তুলতে গেলেন;
কিন্তু বলা হল,
যিনি আপনাকে চেকটি ইস্যু করেছেন,
তাঁর অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। চেক দাতার কাছে বারবার চেয়েও আর লাভ হল না।
প্রশ্ন হল এখন আপনি কি করবেন?
সমস্যা নেই,
আইন সব সময় আপনার পাশেই আছে। আপনি যদি এমন চেকের মাধ্যমে প্রতারিত হন,
তাহলে চাইলেই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। এই অপরাধের বিচারের জন্য হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন,
১৮৮১ নামের একটি আইন রয়েছে। এই আইনের ১৩৮ নম্বর ধারায় আপনি সেই প্রতারক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিকার পেতে পারেন এবং তার কাছে থেকে তিন গুন টাকা আদায় করতে পারেন।
চলুন বিষয়টি আইনের আলোকে ভাল করে বোঝা যাক:
চেক কি?
চেক (Cheque) বললে এখানে ব্যাংক চেককেই বোঝানো হয়েছে,
আইনের ভাষায় নেগোশিয়েবল ইনস্টুমেন্ট অ্যাক্ট,
১৮৮১ এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে।
“চেক”
বলতে কোন নির্দিষ্ট ব্যাংকের উপরে কাটা
(Drawn) এবং কেবলমাত্র চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য বিনিময়পত্র বা বিল অব এক্সচেঞ্জকে বুঝায়।
চেক নিয়ে প্রতারিত হলে কি করবেন?
কখন ও কি কারনে চেক ডিসঅনার হাতে পারে
- ব্যাংকের হিসাবে অপর্যাপ্ত তহবিল বা অর্থ থাকলে। তার মানে চেকে যে পরিমান অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে তা অপেক্ষা কম অর্থ হিসাবে থাকা।
- যে ব্যক্তি চেক প্রদান করেছে যদি তার স্বাক্ষর না মেলে।
- যদি চেকে উল্লেখিত অর্থের অংক ও কথার গরমিল পাওয়া যায়।
- চেক মেয়াদ উর্ত্তীণ হলে।
- যথাযথভাবে চেক পূরণ করা না হলে।
- চেকে ঘষামাজা করলে।
- চেকে কাটাকাটি থাকলে পূর্ণ স্বাক্ষর দিয়ে তা সত্যকরণ করা না হলে।
- এই কজ অব একশনের ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে চেক প্রদানকারীকে একটি নোটিশ দিয়ে বিষয়টি তাকে জানাতে হবে এবং টাকা পরিশোধের জন্য তাকে আহ্বান করতে হবে।
- চেক দাতা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে টাকা প্রদান করবেন বা যথাযথ উত্তর প্রদান করবেন।
- যদি তিনি টাকা প্রদান না করেন বা তার উত্তর আপনার কাছে যথাযথ মনে না হয় তবে এবার আপনি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এই হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধার অনুসারে মামলা করতে পারবেন।
- ১। চেক ইস্যু করার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে উপস্থাপন না করলে চেকটির কার্যকারিতা আর থাকে না। তাই চেক অবশ্যই ইস্যু করার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে। (ধারা, ১৩৮(১)ক)
- ২। চেকটি ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের জন্য চেক প্রদানকারীকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। (ধারা, ১৩৮(১)খ)
- ৩। এই ৩০ দিনের মধ্যে (উক্ত ব্যক্তির নোটিশ পাওয়ার পর ৩০ দিন) চেক প্রদানকারী টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এ সময় পার হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। কোনোভাবেই নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না।
- চেক ইস্যুর তারিখ
- ইস্যুকারির নাম ও তথ্য / কোন কোম্পানি হলে তার বিস্তারিত তথ্য
- চেক ডিজঅনার হবার তারিখ
- চেকের বিস্তারিত তথ্য [ব্যাংকের নাম, শাখা, হিসেব নম্বার, চেক নম্বর]
- উল্লেখিত টাকার পরিমান
- মূল চেক
- ডিজঅনারের রসিদ
- আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি
- পোস্টাল রসিদ – প্রাপ্তি রসিদ
- চেক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য [যদিও সব সময় জরুরী নয়]
- চেকের প্রাপক বা ক্ষেত্রমতে চেক চেক এর যথাকালে ধারক কর্তৃক উপস্থাপন কৃত অভিযোগ ব্যতীত কোন আদালত ১৩৮ ধারার আওতায় কোন অপরাধ শাস্তিযোগ্য বলে আমলে আনতে পারবেন না।
- ১৩৮ ধারা উপধারা (গ) এর বিধান মোতাবেক কোন অপরাধ উদ্ভবের তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে অনুরূপ অভিযোগ দাখিল করতে হবে।
- দায়রা জজ আদালতের অধীনস্থ কোন আদালত ১৩৮ ধারার অধীন শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধের বিচার করতে পারবেন না।
- খুব কাছের মানুষ বা অফিস চাইলেও নিজে একাউন্ট থেকে অন্যের কাজের জন্য চেক দেয়া যাবে না।
- চেক বই সাবধানে পাতা গুনে রাখতে হবে কোন বই বা পাতা হারারে সাথে সাথে ব্যাংকে জানাতে হবে এবং জিডি করতে হবে।
- যেখানে সম্ভব একাউন্ট পে চেক দিতে হবে, ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসা একাউন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবসায়ীক একাউন্টে লেনদেন করতে হবে।
- চেকের তারিখ খুব সচেতন ভাবে দিতে হবে এবং সেই তারিখ মনে রেখে একাউন্ট চেক করতে হবে।
- কোন ব্যবসার প্রেক্ষিতে লেনদেন হলে সেই চালান রাখতে হবে।
- যদি বিপদে পরেই যান বা কোন লিগ্যাল নোটিশ পান তবে দেরি না করে দ্রুত একজন উকিলের সাহায্য নিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে হবে।
- যগ্ম দায়রা জজ এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল হবে দায়রা জজের নিকট; ৩০ দিনের মধ্যে।
- অতিরিক্ত দায়রা জজ এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল হবে হাইকোর্ট বিভাগে; ৬০ দিনের মধ্যে।
- দায়রা জজ এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল হবে হাইকোর্ট বিভাগে; ৬০ দিনের মধ্যে।
ক) ৬ মাসের মধ্যে মধ্যে মামলাটি না করার কারনে এই আইনের অধীনৈ মামলটি নেওয়া হল না।
খ) এই আইনে মামলাটি চলাকালীন সময়ে বিবাদি মৃত্যুবরন করলেন।
- চেকর মামলায় রায় পেতে কত সময় লাগে?
- আগাম চেক দিয়ে তারপর জিডি করলে কি হবে?
- ভুয়া চেক দিলে কি হবে?
- চেক ডিজঅনারের মামলা করতে হলে কি চুক্তি থাকতে হবে?
x
এই ধরনের কারণ গুলোতে যখন চেক দাতার বা হস্তান্তর-কারীর কোন দোষ থাকে বা প্রতারণা থাকে তখন আপনি এই আইনের অধীনে চেক ডিস অনারের মামলা করতে পারবেন।
কখন চেক ডিসঅনার হয়েছে বলে ধরা হবে?
যদি চেকটি ইস্যুর তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে যথাযথ ভাবে জমা দেওয়া হয় এবং ব্যাংকে চেকের সমপরিমাণ টাকা সেই একাউন্টে না থাকার কারণে সেটা ডিসঅনার করে ফেরত দেয় তবে সেটা চেক ডিস অনার হবে। ব্যাংক ডিসঅনার করলে কেন করলো তা উল্লেখ করে একটি ডকুমেন্ট দেবে।
মনে রাখতে হবে চেক ইস্যুর তারিখের ৬ মাসের মধ্যে যেদিন আপনি ব্যাংকে চেকটি ভাঙ্গাতে যাবেন এবং গিয়ে দেখবেন যে চেকটি অনার করে আপনাকে টাকা দেওয়া হয়নি বরং ফেরত এসেছে সেই দিন থেকে আপনার কজ অব একশন
(Cause of Action) শুরু হবে,
সহজ ভাষায় আপনার এই আইনের অধীনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রয়োজনীয় তিনটি ধাপ:
চেক প্রতারনায় প্রতিকার চাওয়ার উপায়
প্রতিকার পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী কিছু কাজ হয়েছে কিনা দেখে নিতে হবে।
কিভাবে নোটিশ দেবেন?
প্রথমে চেষ্টা করতে হবে নোটিশটি ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি চেক প্রদানকারীর ওপর জারি করতে। যদি এ ক্ষেত্রে সম্ভব না হয়, তাঁর বাসস্থান বা যে স্থানে তিনি সর্বশেষ কাজ করেছেন, সেই ঠিকানায় প্রাপ্তি স্বীকার রসিদসহ (এডি) ডাকযোগে নোটিশ পাঠাতে হবে। উল্লেখ্য, নোটিশটি ফেরত না এলেও নোটিশটি চেক প্রদানকারীর ওপর সঠিকভাবে জারি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। নোটিশ জারির তৃতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে, একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় পত্রিকায় নোটিশটি প্রকাশ করা।
এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলে THE
NEGOTIABLE INSTRUMENTS ACT, 1881 (হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন,
১৮৮১) আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করে মামলা করতে হবে।
এই ধরনের মামলা নালিশী মামলা হিসেবে
করতে হয়। আমরা জানি যে ফৌজদারী মামলায় সাধারণত থানায় এফ আই আর বা জিডি আকারে হয় এবং সরকার তাতে বাদী হয় কিন্তু
তার মানে চেক নেগোসিবল ইনেস্টুমেন্ট এক্ট ১৮৮১ এর অধীনে চেক ডিস-অনারের
মামলা একটি সিভিল ন্যচারের মামলা হওয়া এখানে ব্যতিক্রমী নিয়ম মানতে
হবে এই ডিস-অনারের
মামলা কখনো থানায় করা যায় না বরং নালিশী মামলা হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার চাইতে হয় এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলা গ্রহণ করলে তা প্রস্তুত করে তা দায়রা আদালতে বিচারের জন্য পাঠায়;
এবং যেহেতু এটি নালিশী মামলা তাই ফরিয়াদিকে
(যিনি বিচার চান/
প্রতারিত হয়েছেন)
এই মামলার সকল খরচ বহন করতে হবে।
মামলা করতে যে সব তথ্য এবং দলিল (কাগজপত্র) প্রয়োজন
এসবের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হয়।
মনে রাখতে হবে, একবার চেক ডিজঅনার হলে একবার অপরাধ সংঘটিত হয়। কোনো কারণে যদি প্রথমবার চেকটি ডিজঅনার হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ না পাঠাতে পারেন,
তাহলে দ্বিতীয়বার চেকটি ডিজঅনার করাতে পারেন। এভাবে একাধিক বার ডিজঅনার করিয়ে নোটিশ পাঠাতে পারেন। তবে একবার চেক ডিজঅনার হলে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা করা হলে এক অপরাধের জন্য বারবার মামলা করা যাবে না।
মামলা কোথায় করবেন?
চেক ডিসঅনারের মামলাটি অভিযোগ বা নালিশি মামলা
(CR) হিসেবে জুডিসিয়াল ম্যজিষ্ট্রেটের নিকট দায়ের করতে হবে আর মহানগর এলাকা হলে মেট্রোপলিটন ম্যজিষ্ট্রেট আদালতে দায়ের করতে হবে। চেকটি যে ব্যাংকে ডিজঅনার হয়েছে,
সেই ব্যাংকের এলাকা যে আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে,
সেই আদালতে করতে হবে। ম্যজিস্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধি,
১৮৯৮ এর ২০০ ধারায় নালিশকারীকে পরীক্ষা করার পর যথাযথ মনে হলে মামলাটি আমালে নিবেন এবং তারপর মামলাটি প্রস্তুত করে বিচারিক আদালতে পাঠাবেন।
এখানে উল্লেখ্য যে,
১৮৮১ সালের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৪১(গ)
ধারা অনুযায়ী,
চেক ডিজঅনার এর মামলার বিচার করতে পারে দায়রা আদালত কিন্তু সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে এখন থেকে চেক ডিজঅনার এর মামলার বিচার করতে পারবে শুধু যুগ্ম দায়রা জজ। এই রায়ের কারণে এখন ভুক্তভোগীকে আর আপিল করার জন্য উচ্চ আদাতে যেতে হবে না যুগ্ম দায়রা জজ আদালত হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতেই আপিল করতে পারবেন।
অপরাধ আমলে নেয়ার ব্যাপারে বিশেষ বিধান
ফৌজদারী কার্যবিধি,
১৮৯৮ থেকে বর্ণিত থাকুক না কেন:
প্রতিকার / দণ্ড
চেক ডিজঅনার অপরাধের শাস্তি হচ্ছে,
এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিন গুণ পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল চেক ডিস-অনারের শাস্তি যদি চেকে উল্লেখিত টাকার ৩গুন জরিমানা হয়,তাহলে টাকাটা কে পাবে?
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন,১৮৮১ এর ১৩৮(২)
ধারার বলা হয়েছে,উপ-ধারা(১)
মোতাবেক যেক্ষেত্রে অর্থদণ্ড আদায় হয় সেক্ষেত্রে আদায়কৃত অর্থদণ্ড হতে চেকে বর্ণিত টাকা যতদূর পর্যন্ত আদায়কৃত অর্থদণ্ড হতে প্রদান করা সম্ভব চেকের ধারককে প্রদান করতে হবে।
সুতরাং,
চেকের ধারক বা গ্রহীতা চেকে বর্ণিত টাকার বেশী পরিমাণ অর্থ পাওয়ার অধিকারী নয়। কোন আদালত চেকে বর্ণিত টাকার তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানা করলেও বাদীকে চেকে বর্ণিত টাকা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বাকী টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিবেন।
চেকের মামলা থেকে বাঁচতে চাইলে
অনেক সময়েই আমরা অনাকঙ্খিত চেকের মামলায় জরিয়ে যাই তখন আমাদের ডিফেন্স করা কঠিন হয়ে যায়,
অন্যদিকে আপিল করতে হলেও মোটা অংকের টাকা জমা দিয়ে আপিল করতে হয় তাই আমাদের কিছু বিষয়ে সর্তক হতে হবে,
যেমন;
আপিল
এই আইনে সংক্ষুব্দ ব্যাক্তির আপিলের সুযোগ আছে। তবে আপিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে,
চেকে উল্লেখিত টাকার কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন,
সেই আদালতে জমা দিতে হবে। টাকাটা বিচারিক আদালতে জমা দিতে হবে,
আপীল আদালতে নয়। (ধারা,
১৩৮ ক)
কোথায় আপিল হবে:
আপিল সম্পর্কে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে সরাসরি কিছু উল্লেখ করা হয় নি তবে বলা আছে
CrPC এর আপিলে নিয়ম কার্যকর হবে। যা ফৌজদারী কার্যবিধি,
১৮৯৮ এর ৪০৮ ধারায় উল্লেখ রয়েছে।
রিভিশন
রিভিশন আপিলে মতই
ফৌজদারী কার্যবিধির একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উচ্চ আদালত নিন্ম আদালতের রায়কে পর্যবেক্ষণ করেন। তবে এই রিভিশন করা যায় শুধু যখন আইনগত বিষয়ে কোন সমস্যা থাকে
(আইনগত প্রশ্ন)। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪৩৯ ও ৪৩৯ক ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা জজ রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। এই রিভিশনের জন্য ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
অন্য আইনে চেক ডিসঅনারের মামলা
ধরুন, কোন কারনে এই আইনের অধীনে চেকের মামলাটি যথাযথ ভাবে দায়ের করা সম্ভব হল না অথবা ধরুন টাকাটি উদ্ধার করা সম্ভব হল না।
এমন অবস্থার ক্ষেত্রে আরো দুটি উপায় খোলা আছে।
১) দন্ডবিধির অধীনে মামলা করা: দন্ডবিধি ৪০৬ ও ৪২০ ধারা
(প্রতারণা)
অনুসারে ফৌজদারি মামলা করা যায়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও জরিমানা হতে পারে।
২) দেওয়ানী মামলা করা: চেকের সম্পূর্ণ টাকা আদায় না হলে পরবর্তীতে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দেওয়ানী মামলা করা যাবে। দেওয়ানী মোকদ্দমা করতে চাইলে তা দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৩৭ অনুসারে জেলা জজ বরাবর অথবা হাইকোর্ট বিভাগে করতে হবে।
বিনিময়যোগ্য দলিল আইন,
২০২০ (আসছে )
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন,
১৮৮১ টি এখনো কার্যকর রয়েছে তবে
আইনটির কিছু সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে আইনটি
বাতিল করে নতুন ও যুগোপযোগী করে একটি আইন আনার প্রক্রিয়া চলছে । যার নাম দেয়া হয়েছে বিনিময়যোগ্য দলিল আইন,
২০২০ (এখানে ক্লিক করে খসড়া আইনটি দেখে নিন) এবং এই আইনটির খসড়া গত ১৫ জানুয়ারি ২০২০ এ অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশ করে। এই আইনে চেক ডিসঅনার হলে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৪ গুন পর্যন্ত অর্থ দণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
খসড়া আইটি পূর্ণ আইনের মর্যাদা পাওয়ার সাথে সাথে আমরা এই আইনের খুঁটিনাটি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব;
আমাদের সাথেই থাকুন।
সাধারন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
চেকের মামলা রায় পেতে সাধারণত কোন জেলায় বছর খানেক সময় লাগতে পারে বা বেশীও সময় লাগতে পারে,
অন্য দিকে রাজধানী ঢাকায় মামলার চাপ থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই আরও বেশি সময় লাগে।
আমাদের দেশে আগাম চেক দিয়ে অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি প্রবণতা আছে কিন্তু বিষয়টি আইন সিদ্ধ নয়। কেউ চেক দিয়ে তারপর প্রতারণা করার জন্য বলে যে চেক হারিয়ে গিয়েছিল তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু যেই ব্যক্তি চেক গ্রহীতা তিনি যদি যথাযথ ভাবে প্রমাণ না করতে পারেন যে বৈধ কোন কাজে চেকটা তিনি পেয়েছেন তবে রায় তার বিপক্ষে যেতে পারে।
ভুয়া চেক দিলে জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণার মামলা করা যায়।
বর্তমানে ২০২০ সালে আপিল বিভাগের একটি নতুন রায় পেয়ে অনেকেই বলছেন চেক ডিজঅনারের মামলা করতে হলে বৈধ চুক্তি থাকতে হবে। এই আইনটা একটু জটিল। এর উত্তর একই সাথে হ্যাঁ এবং না। আপনি আইন খুব না বুঝলে আপনার জন্য সহজ উত্তর হল, “না”
আলাদা চুক্তি থাকার প্রয়োজন নেই।
Comments