Skip to main content

বিরোধ নিষ্পত্তি কিংবা কোনো আইনি বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আপস মীমাংসাই কার্যকর উপায়।




আপোষ নামা ফরমেট pdf ফাইল ডাউলোড করতে করতে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন

ডাউনলোড




মামলা-মোকদ্দমা চলাকালীন আপস

কোনো বিষয় নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হলে তা চলাকালীন অবস্থায় আপস মীমাংসা করে নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সব ধরনের দেওয়ানি প্রকৃতির মোকদ্দমায়। বর্তমান দেওয়ানি আইনে এই আপস মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দুই পক্ষ আদালতে হাজির হওয়ার পরে অনুমতিক্রমে আদালতের আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধটি মিটিয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি আপিলে গেলেও এই সুযোগ রয়েছে। একে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বলা হয়। দেওয়ানি কার্যবিধিতে সমঝোতার মাধ্যমে আদালত থেকে ডিক্রি নেওয়ার বিধানও রয়েছে। আদালতে যেকোনো সময় আপসনামা দায়ের করে নিষ্পত্তি চাওয়া যায়। একে আইনি ভাষায় সোলেমূলে নিষ্পত্তি বলে।

পারিবারিক আদালতে প্রথমে বিচার শুরু হওয়ার আগে একবার এবং রায় ঘোষণার আগে দ্বিতীয়বার আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান আছে। সোলেমূলে নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষÿসম্মতিক্রমে কার্ট্রিজ কাগজে নিষ্পত্তির বিষয়ে বিভিন্ন শর্ত লিখে এবং তাদের আইনজীবীরা স্বাক্ষর দিয়ে আদালতে জমা দেন। আদালতে জমা দেওয়ার পর নিজেরা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বলেন যে তাঁরা আপস করে নিয়েছেন। আদালত তখন এ আপসনামাকে রায়ের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। একবার আদালতে আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। অর্থঋণ-সংক্রান্ত মামলায়ও আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির বিধান আছে। কিছু ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলায়ও আপসের সুযোগ রয়েছে। তবে গুরুতর অপরাধের ফৌজদারি মামলাগুলো আপস করা যায় না।

আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি

আদালত না গিয়েও বিরোধের নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এ জন্য তিন শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কী কী শর্তে আপস হচ্ছে তা লিখে স্বাক্ষর করতে হবে। আপসনামা লেখার সময় সাক্ষী রাখা উচিত এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর রাখাও দরকার। এই আপসনামা প্রয়োজনে রোটারি করে নেওয়া উচিত। আপসনামা পারিবারিক, ব্যবসায়িক, জমিজমা যেকোনো বিষয়েই করা যায়। বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তির বণ্টনের জন্য আপসের মাধ্যমে বণ্টন করে নেওয়া যায়। একে বণ্টননামা দলিল বলা হয়। তবে বণ্টননামা দলিল নোটারি করলে হবে না। এ দলিল অবশ্যই সাবরেজিস্ট্রির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে নারী নির্যাতনের কোনো ঘটনায় আপস মীমাংসা করা উচিত নয়। আপসনামা নিয়ে কোনো মিথ্যা বা জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ কোনো জাল আপসনামা তৈরি করেন তাহলে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ (১) ধারা অনুসারে আদালতের বিনা অনুমতিতে যে সব মামলার আপোষ করা যায় তা হল ঃ দণ্ডবিঁধি অনুযায়ী সংঘটিত

অপরাধ ঃ
১। ২৯৮ ধারা -ইচ্ছা কৃতভাবে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা ।যার ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা হয়েছে তিনি আপোষ করতে পারেন।

২। ৩২৩,৩৩৪ ধারা । মারধর করা বা আঘাত দেয়া ।যাকে মারধর করা বা আঘাত দেয়া হয়েছে তিনি আপোষ করতে পারেন ।

৩। ৩৪১-৩৪২ ধারা ,অন্যায়ভাবে বাঁধা দেয়া বা আটক করা ।যাকে আটক বা বাঁধা দেয়া হয়েছে তিনি ।

৪। ৩৫২,৩৫৫,৩৫৮ ধারা আকস্মিক আক্রমণ ও অপরাধমূলক বল প্রয়োগ। যাকে আক্রমণ বা বল প্রয়োগ করা হয়েছে তিনি ।

৫। ৩৭৪ ধারা বেআইনি ও বাধ্যতামুলকভাবে শ্রমে নিয়োগ ।যাকে শ্রমে নিয়োগ করা হয়েছে তিনি আপোষ করতে পারেন ।

৬। ৪২৬-৪২৭ ধারা ,কারো ক্ষতি সাধন করা ।যার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে তিনি ।

৭। ৪৪৭ ধারা ,অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ । সম্পত্তির দখলকার আপোষ করতে পারেন ।

৮। ৪৪৮ ধারা ,কারো গৃহে অনধিকার প্রবেশ ।গৃহের দখলকার আপোষ করতে পারেন।

৯। ৪৯১ ধারা ,অপরাধমূলক চুক্তি ভঙ্গ করা ।যার সাথে চুক্তি করা হয়েছিলো তিনি আপোষ করতে পারেন ।

১০। ৪৯৭ ধারা , ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া ।স্ত্রী লোকটির স্বামী বা অভিভাবক আপোষ করতে পারেন ।

১১। ৪৯৮ ধারা ,অবৈধ যৌন সহবাসের উদ্দেশে নারী অপহরণ ।স্ত্রী লোকটির শামী বা অভিভাবক আপোষ করতে পারেন ।

১২। ৫০০-৫০২ ধারা , কারো মানহানি করা ।যার মানহানি হয়েছে তিনি আপোষ করতে পারেন ।

১৩। ৫০৪, শান্তি ভঙ্গে উস্কানি দেয়ার উদ্দেশে অপমান করা ।যাকে অপমান করা হয়েছে তিনি আপোষ করতে পারেন ।

১৪। ৫০৬,অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শন করা । যাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে তিনি আপোষ করতে পারেন ।

১৫। ৫০৮, বিশ্বাসে প্ররিচিত করা ।যাকে প্ররোচিত করা হয়েছে তিনি আপস কপ্রতে পারেন।

অন্যদিকে ,৩৪৫(২) ধারা অনুসারে আদালতের অনুমতি নিয়ে যেসব অপরাধের মামলা আপোষ করা যায় ঃ

১। ১৪৭ ধারা, দাঙ্গা বাধানো বা দাঙ্গা করা । দাঙ্গার ফলে যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি আপোষ করতে পারেন ।

২। ১৪৮ ধারা , অসরোসসরে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা করা ।যিনি ক্ষতিগ্রোসতো হয়েছেন তিনি আপোষ করতে পারেন ।

৩। ৩২৪ ধারা, মারাত্মক অসরো দ্বারা আঘাত করা । যাকে আঘাত করা হয়েছে সে আপোষ করতে পারে ।

৪। ৩২৫ ধারা ,মারাত্মক অসরো দ্বারা গুরুতর আঘাত করা । যাকে আঘাত করা হয়েছে সে আপোষ করতে পারে ।

৫। ৩৩৫ ,৩৩৬ ধারা ,আকস্মিক উত্তেজনার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত করা যা জীবন বিপন্ন করতে পারে ।যাকে আঘাত করা হয়েছে সে ।

৬। ৩৩৭-৩৩৮ ধারা কারো বেকটিগত নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে অবহেলার সাথে আঘাত করা ।যার নিরাপত্তা বিপন্ন করা হয়েছে বা আঘাত করা হয়েছে তিনি আপোষ করতে পারেন ।

৭। ৩৪৩ ধারা ,তিন বা ততোধিক দিন কোন লোককে বেআইনিভাবে আটক রাখা ।আটককৃত বেকটি আপোষ করতে পারেন ।

৮। ৩৪৬ ধারা ,গোপন স্থানে অবৈধ আটকবানকে আটক বা অবরোধ করা হয়েছে সে আপোষ কোরতে পারেন ।

৯। ৩৪৭ ধারা ,অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বেআইনি আটোক। যাকে আটক করা হয়েছে সে আপোষ করতে পারেন ।

১০। ৩৪৮ ধারা ,ভঁয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় বা সম্পত্তি ফেরত দিতে বাধ্য করার জন্য অন্যায়ভাবে আটক ।যাকে আটক করা হয়েছে সে আপোষ করতে পারে ।

১১। ৩৫৬ ধারা চুরির উদ্দেশে অপরাধমূলক বল প্রয়োগ । যার উপর বল প্রয়োগ করা হয়েছে সে ।

১২। এভাবে , ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫(২) ধারা অনুসারে দণ্ডবিধির ৩৫৭,৩৭৯-৩৮০,৩৮১,৪০৩,৪০৬-৪০৮,৪১১,৪১৪,৪১৭-৪২০,৪২১-৪২৪,৪২৮, ৪২৯,৪৩০,৪৫১,৪৮২,৪৮৩,৪৮৬,৪৯৩,৪৯৪,৫০৯ এবং ৫১১ ধারায় সংঘটিত অপরাধের মামলা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আপোষ করা যেতে পারে ।

কেবলমাত্র ক্ষতি গ্রস্থ ব্যক্তি বা যার বা যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়েছে তারাই মামলা আপোষ করতে পারেন । পক্ষদ্বয়ের যৌথ সাক্ষরে আপোষনামা আবেদনের সাথে আদালতে পেশ করতে হোবে । আপোষ আবেদনে বাদীর স্বাক্ষর নালিশে প্রদত্ত স্বাক্ষরের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে ।জি আর মামলার আপোষ আবেদন কোর্ট ইনসপেকটরের মাধ্যমে পেশ করতে হবে।

আদালত প্রয়োজন মনে করলে আবেদন কারীর জবানবন্দি আবেদনের উল্টো পিঠে রেকর্ড করবেন । আপোষের অনুমতি দেয়ার কারণ আদেশনামায় লিপিবদ্ধ করে আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করবেন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫(৬) উপ ধারা অনুসারে আসামীকে খালাস দিবেন ।মামলার রায় ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত আপোষের আবেদন মঞ্জর  করা যায় ।

Comments

Popular posts from this blog

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন

বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন সুচিপত্র ভূমিকা পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭) ব্রিটিশ শাসনের প্রাথমিক বছরগুলি (1757-1857) 1857 সালের বিদ্রোহ এবং এর প্রভাব প্রয়াত ঔপনিবেশিক সময়কাল (1858-1947) বঙ্গভঙ্গ (1905) ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভারত বিভাজন (1947) উপসংহার বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন (1757-1947) পরিচয় বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন 1757 থেকে 1947 সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাব্দী বিস্তৃত ছিল। এই সময়কালে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন দেখা যায় যা এই অঞ্চলে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। বাংলার ইতিহাসের জটিলতা এবং ঔপনিবেশিকতার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এর স্থানকে উপলব্ধি করার জন্য এই ঐতিহাসিক যুগকে বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ...

Ahmedabad Satyagraha in Gujarat (1918)

Ahmedabad Satyagraha in Gujarat (1918) Introduction The Ahmedabad Satyagraha of 1918 marks a significant chapter in India's struggle for independence. It was a labor strike initiated by the mill workers in Ahmedabad, Gujarat, demanding an increase in wages. The strike was not just a protest against economic injustice, but it also symbolized the fight against oppressive colonial rule. The term 'Satyagraha' was coined by Mahatma Gandhi, which translates to 'insistence on truth' or 'soul force'. It was a method of non-violent resistance, and the Ahmedabad Satyagraha was one of the early instances where this method was employed in the Indian independence movement. The Satyagraha in Ahmedabad was a turning point as it marked the beginning of Gandhi's active involvement in Indian politics. It was here that Gandhi first introduced his methodology of peaceful resistance and negotiation as a means to achieve political and social change. The event holds histori...

Comprehensive Guide on Media and Entertainment Law in Bangladesh

Comprehensive Guide on Media and Entertainment Law in Bangladesh Comprehensive Guide on Media and Entertainment Law in Bangladesh Introduction Overview of Media and Entertainment Law Definition and Scope Media and entertainment law encompasses a broad spectrum of legal issues related to the creation, production, distribution, and consumption of media and entertainment content. This includes various sectors such as film, television, music, publishing, digital media, and advertising. The scope of this law covers intellectual property rights, contracts, censorship, licensing, and regulatory compliance. It is essential for protecting the rights of creators, producers, and consumers, ensuring fair use, preventing unauthorized exploitation, and maintaining ethical standards in content creation and distribution. ...