Skip to main content

নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি: পর্ব ২

 

নাবালক সম্পত্তি বিক্রি আইন



আমরা আগের পর্বের সমাপ্তি টেনেছিলাম একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে। প্রশ্নটি ছিল এমন যে, একজন নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির করার প্রয়োজন কেন? জি হ্যাঁ, একজন নাবালকের সম্পত্তি যেহেতু নাবালক বিক্রি করতে পারে না। সেহেতু, কেনই বা জটিলতা সৃষ্টি করে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে। আর কিছু দিন অপেক্ষা করলে তো নাবালক সাবালক হয়ে যাবে আর তখন নিজের সম্পদ নিজেই বিক্রি করতে পারবে, তখন তো আর এতো প্রশ্ন উত্থাপনের প্রয়োজন পড়ছে না। কিন্তু, সত্যিকার অর্থেই, কিছু না কিছু কারণ রয়েছে, যার ফলে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করার প্রয়োজন পড়তে পারে।


প্রথমত, নাবালক বা সাবালক যেই হোক না কেন, তার মৌলিক চাহিদাগুলো (অর্থাৎ, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা) পূরণের স্বার্থে নাবালক বা সাবালককে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এখন আপনি আমি এমনও পরিবার দেখেছি যারা সাবালক পুত্র বইকি সাবালক পুত্রের স্ত্রী সন্তানকেও বাড়ির কর্তা তথা সাবালক পুত্রের পিতা ভরণপোষণ দিচ্ছে সাথে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার অর্থও। অন্যদিকে, নাবালকের ভরণপোষণের জন্য তার সম্পত্তি বিক্রি করতে হচ্ছে, এমন পরিবারও আমরা কদাচিৎ দেখতে পাই। এই ধরনের পরিবার হয়ত কয়েক হাজারে একটি বলে আমরা সচরাচর এই ধরনের আইনি জটিলতা দেখতে পাই না। কিন্তু, এই ধরনের অনেক নাবালক রয়েছে যারা তাদের বাবা বা মায়ের মৃত্যুতে সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছে অথবা বাবা মা কোন সম্পদ নাবালক সন্তানের নামে ক্রয় করেছেন (আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে নাবালক সম্পত্তি বিক্রি করতে না পারলেও নাবালকের অনুকূলে সম্পত্তি ক্রয় করা যায়), এখন ‘পরিস্থিতির শিকার’ হয়ে বা ‘পরিস্থিতির বিবেচনায়’ উক্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে হচ্ছে, তখন গিয়ে আলোচ্য জটিলতাটি চলে আসছে। ‘পরিস্থিতির শিকার’ এবং ‘পরিস্থিতির বিবেচনায়’ আলাদা করে বলার পেছনেও উদাহরণ দিচ্ছি।


আপনি পরিস্থিতির শিকার মানে হচ্ছে, আপনি বাধ্য। একজন নাবালকের ভরণপোষণ দিতে গিয়ে তার বাবা-মা বা অভিভাবক যখন ব্যক্তিগতভাবে অপারগ তখন তিনি নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য। অথবা, দেখা যাচ্ছে যে, নাবালকের সম্পত্তিটি বিক্রি না করে দিলে সেটি ধ্বংসের পথে। এখানেও আপনি প্রশ্ন রাখতে পারেন, যে সম্পত্তি নাবালকের জন্য ধ্বংসের পথে সেটি কে ক্রয় করবে?- কিছু সম্পত্তি থাকে যেগুলো একজনের জন্য বা এক পেশার মানুষের জন্য যখন শেষ হয়ে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায় তখনি কেবল সেটি অন্যের জন্য ক্রয় করার উপযুক্ত হয়; সেই উদাহরণের আজ না হয় নাই গেলাম। কিন্তু, নাবালকের সম্পত্তি যখন বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন সেটি নাবালকের অভিভাবক বিক্রি করতে পারবে।



এবার আসুন পরিস্থিতির বিবেচনায় কখন নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করার প্রয়োজন পড়তে পারে। 

  • প্রথমত, নাবালকের ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজন না হলেও আপনি অভিভাবক হিসেবে যখন দেখছেন যে নাবালকের সম্পত্তিটির দাম বা মূল্য একেবারে দ্বিগুণ হয়ে গেছে বা কেউ দ্বিগুণ মূল্য পরিশোধ করে উক্ত সম্পদ ক্রয় করতে চাচ্ছে, তখন নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করা বা না করা কোনটা নাবালকের পক্ষে স্বার্থপরতা, সেটাও নিশ্চয়ই আমাকে বলে দিতে হবে না? তাছাড়া, সম্পত্তির মূল্য বিভিন্ন সময়ে কতো কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে তার তো আর কোন ইয়ত্তা নেই।

  • দ্বিতীয়ত, নাবালকের সম্পত্তি বলতে যেটি রয়েছে, সেটি যদি হয় সাদা হাতি পোষার মত, অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী। ঐ মুহূর্তে নাবালকের ভরণপোষণের জন্য উক্ত সম্পত্তি বিক্রির প্রয়োজন না থাকলেও একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনি কি নাবালকের স্বার্থে তার উক্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে পরিস্থিতির বিবেচনায় উদ্যত হবেন না?

  • তৃতীয়ত, আমাদের সমাজে বিধবা আর নাবালকের সম্পত্তির দিকে অনেক মানুষেরই কুনজর থাকে। নাবালকের সম্পত্তি বিক্রিতে যেহেতু কিছুটা আইনি জটিলতা রয়েছে আর সম্পত্তির প্রকৃত মালিক নিজেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক, সেহেতু অনেক অসাধু ব্যক্তিরই টার্গেট থাকে এমন সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল করে নেওয়া যায় কিনা। তাছাড়া, আমরা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো নাবালকের অভিভাবক কে বা কারা হতে পারে এবং অভিভাবক হওয়ার প্রক্রিয়া; কিন্তু এই প্রক্রিয়া চলমান অবস্থাতেও অনেক অসাধু পরের সম্পদ লোভী ব্যক্তির নাবালকের সম্পদ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। তাই, যখন নাবালকের সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় বা কেউ নাবালকের সম্পত্তি অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, তখন নাবালকের অভিভাবক পরিস্থিতির বিবেচনায় উক্ত সম্পত্তি বিক্রি করে উক্ত অর্থ নাবালকের জন্য অন্য কোন নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ বা ব্যাংকে গচ্ছিতও রাখতে পারেন।


এই পর্বে, কি কি কারণে এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করার প্রয়োজন হতে পারে সেটা নিয়েই আলোচনা করা হল। 

পরবর্তী পর্বে, কে বা কারা নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে যেতে যেতে, ছোট করে কিছু নোট বা টোটকা দিয়ে যাচ্ছি।


নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে, তার পুরো অংশ জুড়েই একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, অভিভাবক নাবালকের স্বার্থে যদি নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে তবে বিক্রির পরিবর্তে বন্ধকও রাখতে পারেন। অর্থাৎ, নাবালকের অভিভাবক বৈধ কারণে যদি সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন, তবে সম্পত্তি বন্ধকও রাখতে পারবেন।

আজ এতটুকুই, ধন্যবাদ। উপকারী এলেম অর্জন করা ফরজ, নিজে অর্জন করুন এবং অন্যকে সুযোগ করে দিন। আল্লাহ্‌ হাফেজ


নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি: পর্ব ১



Comments

Popular posts from this blog

How to Protect Your Intellectual Property Rights in Bangladesh

Banking Litigation and Dispute Resolution