মুসলিম আইন অনুযায়ী, বাবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনগত অভিভাবক, আর মা হচ্ছেন- সন্তানের জিম্মাদার। বিচ্ছেদ হলেও মা তার সন্তানের তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা হারান না। ছেলের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তানের বয়ঃসন্ধি বয়স পর্যন্ত মা তাদের নিজের কাছে রাখতে পারবেন। যদি আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান মায়ের হেফাজতে থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, সন্তানের কল্যাণ হবে এবং স্বার্থ রক্ষা পাবে সেক্ষেত্রে আদালত মাকে ওই বয়সের পরেও সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন। তবে মা যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তাহলে সন্তানকে নিজের হেফাজতে রাখার ক্ষমতা হারাতে হতে পারে। মায়ের অগোচরে যদি বাবা জোরপূর্বক সন্তানকে নিজের হেফাজতে গ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে বাবার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা পর্যন্ত দায়ের করা যাবে। আদালত প্রয়োজন বোধ করলে সন্তানকে আলাদা করে বিচারক নিজের কাছে নিয়ে তার মতামত জেনে নিতে পারেন। আবার মা-বাবা পর্যায়ক্রমে সন্তানকে কাছে রাখা কিংবা একজনের কাছে থাকলে অন্যজনকে দেখা করার অনুমতিও দিয়ে থাকেন। পারিবারিক আদালতে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সন্তানকে কাছে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ারও সুযোগ রয়েছে। √ মা কখন সন্তানের জিম্মাদারি হারান? ১/ নীতিহীন বা অশালীন জীবনযাপন করলে, ২/ যদি এমন কারো সাথে তার বিয়ে হয়, যিনি শিশুটির নিষিদ্ধ স্তরের মধ্যে ঘটলে তার ওই অধিকার পুনর্জীবিত হয়, ৩/ সন্তানের প্রতি অবহেলা করলে এবং দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে, ৪/ বিয়ে বহাল থাকা অবস্থায় বাবার বসবাসস্থল থেকে দূরে বসবাস করলে, ৫/ যদি তিনি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করেন, ৬/ যদি সন্তানের পিতাকে তার জিম্মায় থাকা অবস্থায় দেখতে না দেয়া হয়। √ সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব কার? বিচ্ছেদের পর সন্তান যদি মায়ের কাছেও থাকে, তবে সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরোপুরি বাবার। অর্থাৎ মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হলে কিংবা মা-বাবা আলাদা বসবাস করলে বাবাকেই সন্তানদের ভরণপোষণ করে যেতে হবে। ইচ্ছে করলে মা আলাদা থেকেও- বিয়ে বিচ্ছেদ হোক বা না হোক, সন্তানের ভরণপোষণ আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করে ভরণপোষণের অধিকার আদায় করতে পারেন। বাংলাদেশে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর ৫ ধারা মতে, সন্তানের কাস্টডির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার একচ্ছত্র এখতিয়ার পারিবারিক আদালতের। আর কাস্টডি প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত কী কী বিবেচনা করবেন, সেগুলো গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০-এর ১৭ ধারায় বিস্তারিত বলা রয়েছে। এই ধারার বিধান মতে, নাবালক-নাবালিকা যে ধর্মীয় অনুশাসনের অধীন, সেই অনুশাসনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং তার সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করে আদালত অভিভাবক নিয়োগ করবেন। নাবালক-নাবালিকার কল্যাণ কী হবে, তা নির্ধারণ করা হবে নাবালক-নাবালিকার বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, প্রস্তাবিত অভিভাবকের চরিত্র, সামর্থ্য এবং নাবালকের সাথে নৈকট্য ও আত্মীয়তার সম্পর্ক, মৃত মা-বাবার কোনো ইচ্ছা (যদি থাকে) এবং প্রস্তাবিত অভিভাবক নাবালক-নাবালিকার সম্পত্তির বিষয়ে সম্পর্কযুক্ত কি না ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে। এ বিষয়ে নাবালক-নাবালিকার কোনো বুদ্ধিদীপ্ত মতামত থাকলে আদালত সেই মতামতকে প্রাধান্য দিবেন।
Afzal hosen Mandal
Apprentice Lawyer
Narsingdi judge Court
01726634656
Comments