শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ে এ দেশের কোনো মহলের মধ্যে চাপা উল্লাস দেখে আমি প্রথমে অবাক হয়ে যাই।


চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে শ্রীলঙ্কা। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দেশটির নানা দুরবস্থার কথা প্রচারিত হচ্ছে। একটি দেশের মানুষের কষ্ট কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ে এ দেশের কোনো মহলের মধ্যে চাপা উল্লাস দেখে আমি প্রথমে অবাক হয়ে যাই। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশি দূর যাওয়ার দরকার হয় না। একশ্রেণির সুশীল ও পণ্ডিতের মধ্যে শ্রীলঙ্কা চর্চা শুরু হয়েছে প্রচণ্ড উত্তেজনা নিয়ে। শ্রীলঙ্কার ঘটনা যেন বিএনপির মরা গাঙে জোয়ার এনেছে। ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার পথেই এগোচ্ছে।’ ঋণ করে ঘি খেলে কী হয় তার ফিরিস্তি দিচ্ছেন প্রতিদিনই কেউ কেউ। অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প দেশের জন্য কী সর্বনাশ ডেকে আনে শ্রীলঙ্কা তার উদাহরণ। এমন উদাহরণ দিয়েই তারা বাংলাদেশকে সতর্ক করেছেন। কেউ কেউ বাংলাদেশের পরিস্থিতিও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে মন্তব্য করে মুচকি হাসছেন। শ্রীলঙ্কার ঘটনার পর কেউ কেউ ধরেই নিয়েছেন শিগগিরই বাংলাদেশের পরিস্থিতি এ রকম হতে যাচ্ছে। যারা এ ধরনের মন্তব্য করছেন তাদের মধ্যে কারও আতঙ্ক দেখছি না, দেখছি এক ধরনের বুনো আনন্দ। বাংলাদেশ সরকার বিপদে পড়বে, এ স্বপ্নে কারও কারও যেন ঘুম নেই। ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। বিভিন্ন সময় বাইরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পরপরই সরকারের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যখন নির্বাচন হয়, তখন ভারতে কংগ্রেস সরকার। বাংলাদেশের নির্বাচনের পরপরই ভারতে নির্বাচন হলো। কংগ্রেস ওই নির্বাচনে হারল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হলেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপির মতো দক্ষিণপন্থি একটি দল সেক্যুলার ভারতের ক্ষমতা দখল করল। এ সময় বাংলাদেশে দেখলাম উচ্ছ্বাস, মিষ্টি বিতরণ। জানার চেষ্টা করলাম বিজেপি জয়ী হওয়ায় বাংলাদেশে কারও কারও উৎসব কেন? এরা কি বিজেপির সমর্থক? খোঁজ নিয়ে জানলাম, বিজেপি জেতায় খুশি হওয়ার কারণ ভিন্ন। আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ। কংগ্রেস বিদায় নিয়েছে। তাই বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেবে। মোদি সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটাবে। কি ভাবনা, কি স্বপ্নবিলাস! কিন্তু অচিরেই মিষ্টি বিতরণের পয়সা জলে গেল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র- এই ভেবে যাঁরা আনন্দ মিছিল করেছিলেন, খুব সহসাই তাঁরা হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দ্রুতই বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আরও গভীর হলো। এভাবে সারাক্ষণই কিছু মানুষ যেন ওত পেতে থাকে, বিদেশি কেউ এসে আওয়ামী লীগকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে। এমন কিছু বিদেশে ঘটবে তার আঁচ আওয়ামী লীগ সরকারে এসে লাগবে। পাকিস্তানে সংকট হলো, কেউ আশায় বুক বাঁধে বাংলাদেশেও কিছু একটা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে ডাকল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল। ব্যস। দেশে-বিদেশে একযোগে চোঙা ফোঁকা শুরু হলো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য। কবে কীভাবে সরকারের পতন হবে তার বিশদ বিবরণও প্রকাশিত হতে থাকল। এ সরকার কখন কীভাবে বিদায় নেবে তা নিয়ে গত ১৩ বছরে কিছু মানুষ চিন্তা করতে করতে পাগল হয়ে গেছে। পাগল হয়ে যাওয়া সেই মানুষগুলোকে যেন জীবনীশক্তি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ পরবর্তী শ্রীলঙ্কা- এমন উচ্চারণ এখন কান পাতলেই শোনা যায়। এমন কথায় অনেকেই আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। আসলে কি তাই? বাংলাদেশের সৌভাগ্য যে আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। যিনি প্রতি মুহূর্তে জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন। জনগণের মনের ভাষা পড়তে পারেন। জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে না কখনো। বাংলাদেশ ব্যর্থও হবে না।

Comments

Newsplace said…
right kotha golo sotto

Popular posts from this blog

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

একটি ভিত্তিহীন গুজব উড়িয়ে দেওয়া: বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ফ্রেঞ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়নি৷

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন