একটা সময় খুব একা ফিল করতাম, হতাশ ছিলাম, আর সাজেকের গল্প পড়তাম ব্লগে, পেপারে, বইয়ে। সেখানকার জীবনযাত্রা জেনে গিয়েছিলাম আরো দুই বছর আগেই। লুসাই পাংখোয়া জাতির কথা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। ক্লাস ছেড়ে একটা সময় সাজেকে পালিয়ে হতাশা থেকে বাচঁতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাজেক আমার দেখা হয়নি সে সময়। আরো কিছু বছর আগেই সাজেক ছিল একটা দুর্গম জায়গা। আর আজ সেখানে আর্মির কল্যানে আমরা যেতে পারছি।
Paharer choray ami aka |
খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে মারিশ্যা রাস্তার উপর দিয়ে কাচালাং পার হয়ে মাচালাং হয়ে রুইলুই পাড়ায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেক ভ্যালীতে আসতে হবে।
সাজেকে কি আছে যা নিয়ে এত হাউ কাউ?
সাজেকের পাহাড় চূঁড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অদ্ভুত দৃশ্য দেখে সকল ক্লান্তি ও কষ্ট নিমিষেই মিলিয়ে যায় ।
Kom khoroche sajek jaoyar video dekhte click koron
প্রকৃতির এতো সুন্দর রূপ আগে কখনও দেখিনি। সাজেকের এই প্রাকৃতিক রূপের সাথে পাংখোয়া ও লুসাই আদিবাসীদের বৈচিত্রময় জীবন যাত্রা দেখে আরও বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যাই। উঁচু মাচার ঘরে গাছের গুড়ি কেঁটে বানানো সিঁড়ি, ঘরের ছাউনী বাঁশের পাতার।
ঘরের সামনে ফুলের বাগান, মাঝে মাঝেই ক্যাকটাস ও অর্কিড শোভা পাচ্ছে রুইলুই গ্রামটি। ঢালুতে ২/৩ শত বছরের পুরোনো বিশাল বিশাল গাছ। বাড়ির অদূরেই অসংখ্য কমলা বানান। এরই মাঝে চোঁখে পড়ে অসংখ্য ঔষুধী গাছ-গাছড়া। একেবারে ঢালুতে যেদিন তাকাই সেদিকই লক্ষ কোটি বাঁশ আর বাঁশ।
সেই ঘর থেকে একে একে বেড়িয়ে আসছে আদিবাসীরা। কেউ পানি আনতে, কেউ বা জুম ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল আনতে ব্যস্ত তারা। পরনে তাদের জিন্সের প্যান্ট,গায়ে হাতা কাঁটা সট গেঞ্জি, শার্ট, স্টাট ইত্যাদি। লাবন্যময়ী রূপসী মেয়েদের দেখে মনে হয়েছে বলিউডের কোন নায়িকা এখানে শুটিং-এ এসেছে।
পোষাক দেখে মনে হয়েছে এ যেন বাংলাদেশের ভেতর এক খন্ড ইউরোপ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘোরাঘুরি এক পর্যায়ে জানাগেল তাদের ধর্ম খৃষ্টান। মিজো ভাষায় তারা কথা বললেও ইংরেজি তাদের অক্ষর ইংরেজী। লুসাই ও পাংখোয়া আদিবাসীরা বাংলা ভাষার চেয়ে ইংরেজিতে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করে।
মাচালাং বাজারে প্রতি শুক্রবার হাট বসে, চাইলে এখানে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। বাজারে সব ক্রেতা বিক্রেতা সবাই পাহাড়ী, ২/১ জন বাঙালি। সাজেকের স্থানীয় হেডম্যান এর নাম লালথাংগা লুসাই, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নাম চংমিং থাংগা লুসাই।
সাজেকের উচ্চতম পাড়ার নাম কংলাক পাড়া (কমলক), আসার পথে অনেক কমলা বাগান আছে। কমলক রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পুতে অবস্থিত।
সেখানকার উপজাতিরা পাঙ্কু সম্প্রদায়, অধিকাংশই শিক্ষিত এবং পোশাকে সেই রকম আধুনিক। পাকা পেপে আর কলা খেয়ে পেট ঠান্ডা করেছি আমরা। পেপে আর কলা খাওয়ার সময় দেখলাম তাদের লাইসেন্স করা বন্দুকে তেল দিচ্ছে তারা, একটু পরই দুইজন হরিণ শিকারে বেরিয়ে পড়ে।
কাংলাক থেকে আর সামনে না যাওয়াই ভালো কারন অপহরণের আশংকা রয়েছে।
এখানে কফির চাষও হয়। তাদের চাষের কফি খেলাম।
আর বেশি মজা পেয়েছি রাতে গির্জায় লুসাইদের নাচ গান বাজনা, রাতে ফানুস উড়ানো। আর ভোর বেলায় মেঘের নদী।
ধন্যবাদ আমার সাথে যাওয়া ভাইদের , যারা আমার উপর ব্লাইন্ড ট্রাষ্ট করে সাজেকে গিয়েছে। জানতাম না কি আছে সেখানে, গিয়ে সব ম্যানেজ করেছি আমরা সবাই,
Comments