“মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি “- সৈয়দ আমির উল ইসলাম




“মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি “- সৈয়দ আমির উল ইসলাম




মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে যারা মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত ছিলেন ,এবং ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী এবং নিয়ামক ছিলেন তাদের ভাষ্য হতে পারে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ন সংযোজন। ব্যারিস্টার সৈয়দ আমির উল ইসলাম “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি” নামক বইতে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন নির্মহ নির্মোহ বর্ণনা তার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার ।




ব্যারিস্টার সৈয়দ আমির-উল ইসলাম~

মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রধান সহায়ক ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন শীর্ষ সংগঠক এবং প্রথম সারির সৈনিক । তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচয়িতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা।মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল অর্থাৎ দীর্ঘ নয় মাস সৈয়দ আমির উল ইসলাম আর তাজউদ্দিন একই রুমে থাকতেন।




তিনি তার এই বইতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন আলোচিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ।




বইয়ে তিনি ২৫ শে মার্চ রাত থেকে আত্মগোপনের ঘটনা বিশদভাবে উল্লেখ করেন , তাজ উদ্দিনের সাথে তিনি কীভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী থেকে নিজেকে রক্ষা করে ভারত গিয়ে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখেন নিজেদের জীবন বাজি রেখে।




বঙ্গবন্ধু কেন ২৫ শে মার্চ রাতে আত্মগোপন করেননি তার ব্যাখ্যা ও আছে ,তার ভাষ্যমতে..




আমরা সংক্ষেপে শহরের অবস্থা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে(২৫ শে মার্চ) আমাদের সাথে চলে যাবার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানাই। বঙ্গবন্ধু তাঁর পূর্ব সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বললেন, তোমরা প্রতিজ্ঞা পাঠ করেছ, আমি যা নির্দেশ করবো তাই শুনবে। তারপর তিনি আমাদের দু’জনের পিঠে দু’হাত রেখে বলেন, ‘কামাল, আমিরুল আমি কোনদিন তোমাদেরকে কোন আদেশ করিনি। আমি তোমাদের আজ আদেশ করছি, এই মুহূর্তে তোমরা আমার বাড়ী ছেড়ে চলে যাও। আর তোমাদের দায়িত্ব তোমরা পালন করবে’। আর শহরের অবস্থার কথা শুনে তিনি বলেন, আমি বাড়ী ছেড়ে চলে গেলে হানাদাররা আমার জন্য ঢাকা শহরের সকল লোককে হত্যা করবে। আমার জন্য আমার জনগণের জীবন যাক এটা আমি চাই না


স্বাধীনতার ঘোষণা তারা শুনতে পারেননি ২৬ শে মার্চ দিবাগত রাতে, আত্মগোপনে ব্যাস্ত ছিলেন বিধায় । পরের দিন অবশ্য শুনেছিলেন।তার ভাষ্যে-

আমাদের দলীয় একজন কর্মী-বন্ধুর বাড়িতে রাত্রি যাপন(২৭ মার্চ) করি। বাড়ীর লোকেরা তাঁতের কাজ করে খায়। স্নান করে খেতে যাব, হঠাৎ স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান কানে ভেসে আসলো। ঘোষক বেতারে বলছেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে হাজির হতে বেতারে নির্দেশ দেয়া হলো। প্রথমে এদের নাম-ধাম কিছুই বুঝা গেল না। ঠাওর করে উঠতে পারলাম না, কারা কোত্থেকে এই বেতার চালাচ্ছে। পরে বেতারে মেজর জিয়ার কন্ঠ শোনা গেল।




কলকাতায় পৌঁছে ( মার্চের শেষে) এম আর সিদ্দিকীর কাছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের মোটামুটি কিছু খবর পাই। তাঁর কাছে চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের কাহিনীও শুনি। তিনি জানান, মেজর জিয়া একটা জীপে করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের নেতারা এক প্রকার জোর করে জিয়াকে দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করান।

সৈয়দ আমির উল ইসলাম এর মতে শফিউল্লাহ,জিয়া খালেদার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। শফিউল্লাহ খালেদ দুজনই যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের পরিচয় দেন,এরা চিরকাল বীর হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।জিয়ার তেমন কোন বীরত্বের নজির নেই।


মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের দলীয় টানপোড়নের অভিজ্ঞতার কথাও বর্ণনা করেছেন তার বইতে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অবদান সমন্ধে বিশদভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি।


তিনি তার বইতে তাজউদ্দিনের বঙ্গবন্ধু ভক্তির কথাও উল্লেখ করেছেন।


বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বিদেশী সাংবাদিকরা তাজউদ্দিন আহমেদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তাজউদ্দিন প্রতিউত্তরে বলেন” তোমরা জানতে চাচ্ছি আমি কেমন আছি? সন্তানের জন্মের কথা জনক না জানলে তার মর্ম ব্যাথা তোমরা বুঝ? আমি একটি ধাত্রীর কাজ করেছি মাত্র,বাংলাদেশ ভূমিষ্ট হয়েছে।আর তার জনক রয়েছেন হানাদারদের কারাগারে। জাতির জনক হয়ত কিছুই জানেন না, দুঃখ, ক্ষোভে,বেদনায় তাজউদ্দিন ভাই কেঁদে ফেলেন এবং জাতির জনকের মুক্তি দাবি করেন।


বঙ্গতাজ আমীর-উল ইসলামকে প্রায় একথা বলতেন যে, ‘দেশকে আমি ভালবাসি, দেশকে ভালবাসতে গিয়েই বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসেছি এবং দেখেছি যে, দেশের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বঙ্গবন্ধুর মত একজন নেতা দরকার।’


সবমিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের অন্যতম প্রধান দলিল হয়ে থাকবে বইটি।


তথ্যসূত্রঃ

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি –

ব্যারিস্টার সৈয়দ আমির-উল ইসলাম।

Comments

Popular posts from this blog

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

একটি ভিত্তিহীন গুজব উড়িয়ে দেওয়া: বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ফ্রেঞ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়নি৷

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন