বাংলাদেশের না পাওয়া শেখ কামাল শেখ কামাল

বাংলাদেশের না পাওয়া শেখ কামাল
শেখ কামাল………!


অনেক বড় এক দীর্ঘশ্বাসের এক নাম! বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তুলেছিলেন মেধায় ও মননে! কিন্তু ঘাতকরা বেশীদিন বাচঁতে দেয়নি তাকে!

খেলার মাঠ, রাজনীতির মাঠ , মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গন, সাংস্কৃতিক অঙ্গন একাধারে সবকিছুতে সদর্পে বিচরণ করতেন শেখ কামাল।শেখ কামাল সেসময়ে যেন সময়ের চাইতে একধাপ এগিয়ে থাকা ছাত্রনেতা ছিলেন।শেখ কামালের কর্মচঞ্চল ক্ষণস্থায়ী জীবনের গল্প আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।

আসুন দেখে নেই শেখ কামালকে …

মুক্তিযুদ্ধ


মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্পেশাল ট্রেনিংয়ের প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শেখ কামাল অফিসার ক্যাডেট ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন,ছিলেন সর্বাধিনায়কের এডিসি।



মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস রণাঙ্গণে কাটিয়েছিলেন লেফটেনেন্ট শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন।

ক্রীড়াঙ্গন


শেখ কামাল গতিময় ফাস্ট বোলার ছিলেন,১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের হয়ে, সহ-অধিনায়ক ছিলেন তিনি। আর ভলিবল খেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন করেন নিজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগকে।বাস্কেটবলে এসএম হল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাম্পিয়ন। টিম শেখ কামালের ক্যাপ্টেন্সিতে। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাডমিন্টনেও তার উজ্জ্বল উপস্থিতি, দ্বৈতে একবার রানার্সআপ হন মুরাদ লতিফের সঙ্গে জুটি বেঁধে। ১৯৭৫ সালে সলিমুল্লাহ হলের বার্ষিক ক্রীড়ায় জেতেন ১০০ মিটার স্প্রিন্ট।
ক্রিকেটার শেখ কামাল




প্রতিরোধ



৭৫ সালের কালোরাত্রিতে শেখ কামালকেও বিপথগামী উগ্র সেনারা ভয় দেখাতে পারেনি…. বীরের মত লড়াই করে প্রাণ দিয়েছিলেন। যখন ১৫ আগস্ট কাল রাত্রিতে বঙ্গবন্ধু নিজ বাড়িতে আক্রমনের স্বীকার হোন তখন শেখ কামাল ই সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন,তার প্রতিরোধে, গুলিতে একজন বিপদগামী সেনা নিহত হয়েছিলো…কয়েকজন আহত কিন্তু তিনি একা বেশিক্ষণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন নি আততায়ীদের ভারী অস্ত্রের সাথে…তিনি অবশ্য সময়ক্ষেপণ করতে পেরেছিলেন, কিন্তু অন্য কারো সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না আততায়ীদের সাথে,বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধার মত জীবন দিলেন খণ্ডযুদ্ধে!অসীম সাহসী এ লোক নিশ্চিত পরাজয় জেনেও অসীম সাহসিকতার সাথে আততায়ীদের সাথে লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন…


রণাঙ্গণে শেখ কামাল



অথচ দুই ঘন্টা আগেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন,তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ক্যাম্পাসের উৎসবমুখর পরিস্থিতি ও পরদিনের সভার প্রস্তুতি দেখভাল করতে গিয়েছিলেন। কারণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আসার কথা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে,সে অনুষ্ঠান সমন্ধে দিক নির্দেশনা দিতে শেখ কামাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
রাত দুটোর দিকে ক্যাম্পাস থেকে ধানমন্ডির ৩২ এ আসলেন।ওই যাওয়াই শেষ যাওয়া…… জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ওবায়দু্ল কাদের বিদায় জানিয়েছিলেন সেসময় শেখ কামালকে।


সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শেখ কামাল


ছাত্র সংগঠক


ছাত্র সংগঠক হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন শেখ কামাল,৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা কলেজ থেকে শত শত ছাত্র নিয়ে আসতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলে। সক্রিয় ছাত্রলীগের সংগঠক ছিলেন।ঢাকা কলেজ থাকাকালীন ছাত্রলীগের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।সেসময় শেখ কামালের নেতৃত্বে নিয়মিত বুলেটিন বের হতো ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে।এই বুলেটিন থেকেই বঙ্গবন্ধু নামের সূত্রপাত,যা দিয়েছিলেন শেখ কামালের বন্ধু রেজাউল হক চৌধুরী মোশতাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কর্মীদের সংস্কৃতি চর্চা এবং মেধা এবং মননশীলতার চর্চার জন্য তিনি নিয়মিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন,মাসিক বুলেটিন বের করার ব্যাবস্থা করেছিলেন ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের জন্য। কিন্তু এত কিছুর পরেও নিজে কখনো ছাত্রলীগ থেকে কোন পদ পদবী নেননি।সব সময় উপেক্ষা করতেন পদ পদবী। সবসময় বলতেন ‘ আমি তো আছিই ‘। রাজনীতিতে পদ পদবীর চাইতে তার কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ প্রাধান্য পেত।


শেখ কামাল
ক্রীড়ামোদী


চৌকস সংগঠক হিসেবে আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। যেটি বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা ক্লাব।স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রিকেট, ফুটবল,হকি তথা আধুনিক ক্রীড়ার পথচলা শেখ কামালের হাত ধরে। ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্ট কে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দূরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশী কোচ ছিলোনা।শেখ কামালের প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্লাবে স্পনসর করার জন্য অনেক রাজাকার বা আল বদর টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চাইলে ও শেখ কামাল কখনো নেননি।উল্টো তিনি রাজাকার আল বদরদের বিরুদ্ধে থানায় রিপোর্ট করেছিলেন। আবাহনী ক্লাবের খরচ চালানোর জন্য শেখ কামাল একটি সার্কাস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সংস্কৃতিমনা


শেখ কামাল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্পন্দন নামে একটি ব্যাণ্ড দল গড়েছিলেন। শেখ কামাল ছায়ানটে সেতার শিখতেন। থিয়েটারে ও সময় দিতেন। মঞ্চনাটকে অভিনয় ও করেছিলেন। পরিবারক থেকেই উদার এবং সংস্কৃতিমনা হবার সহজাত শিক্ষা পেয়ে শেখ কামাল তা বাস্তব জীবনে প্রায়োগ করেছিলেন।



বীর মুক্তিযোদ্ধা,চৌকস সংগঠক,দক্ষ ক্রীড়াবিদ, সংস্কৃতিমনা কোনটি ছিলেন না শেখ কামাল……

ঘাতকরা জানতো শুধু মুজিবকে শেষ করলে হবেনা তাকে সপরিবারে শেষ করতে হবে না কারণ শেখ মুজিবের পরিবারের প্রত্যেকে একেকটা মুজিব!তাই নির্মমভাবে হত্যা করে সকলকে তারা। অতীত ভবিষ্যত বর্তমানকে তারা চিরতরে মুছে ফেলতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে,কিন্তু সে চেষ্টায় তারা একেবারে বিফল। কারণ জীবিত মুজিবরের চাইতে মৃত মুজিব হাজার লক্ষ কোটি গুন শক্তিশালী।


তথ্যসূত্র :
এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল – মহিউদ্দীন আহমদ
বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য – ওবায়দুল কাদের



Comments

Popular posts from this blog

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

একটি ভিত্তিহীন গুজব উড়িয়ে দেওয়া: বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ফ্রেঞ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়নি৷

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন