জামাই-শ্বশুর - জসীম উদ্দীন

 
অনেক দিন জামাই শ্বশুর বাড়ীতে আসে না। সেই জন্যে শ্বশুরের বড় নিন্দা, লোকেরা বলে তোমাদের বাড়ী জামাই আসে না কেনো। নিশ্চই ইহার মাঝে কোন গোপন কারন আছে।
কারন যা আছে, শ্বশুর তা ভালোই জানেন। কারন হোল মেয়ে এক বাবার এক সন্তান।তাই শ্বশুর বাড়ীতে শালা, শালী নাই।তাই আনন্দ ফুর্তি করার কেউই নাই।সে জন্যেই জামাই শ্বশুর বাড়ীতে আসে না।
অনেক ভেবে চিনতে ঠিক করলেন, জামাই বাবা কে এবার শ্বশুর বাড়ীতে আনতেই হবে। না হয় সে নিজেই জামাই এর সাথে একটু ঠাট্টা মসকরা করলেন।বাড়ীতে তো অন্যে কেউই নাই, আর প্রতিবেশীরা ও দেখতে আসবে না।
পরদিনই হাটের মাঝে জামাইর সাথে শ্বশুর মশাই এর দেখা। তিনি জামাই কে বললেন, তা বাবাজী আমাদের ঐমূখো যে আর হনই না।আজ চলুন আমাদের ওখানে।জামাই বাবা বলল, আব্বা জান, আপনাদের ঐখানে গিয়ে কি করবো, বাড়ীতে শালা-সম্মন্ধি কেউই না। কার সাথে কথা বার্তা বলল।?
শ্বশুর মিথ্যা করে বললেন, ঢাকা থেকে আমার দুই ভাইপো এসেছে, কলেজে পড়ে, সম্পর্কে তোমার শালা। ওরাও তোমাকে দেখেনি, তোমাকে পেলে খুব খুশি হবে। শালা দুলাভাই রা একটু হাসি তামাশা আর আনন্দ ফুর্তি করলে।
জামাই বাবাজি রাজী হইল। কিন্তু বাড়ি এসে দেখে কেউই আসে নি। বুজতে পাড়ল শ্বশুর আব্বা তাকে ফাকি দিয়েছেন।মনে মনে বলছিল, আজকের দিনটিই মাটি হয়ে গেল।
শ্বশুর যা ভেবে ছিলেন তা তো তার মনেই আছে।আহারের সময় হল। গ্রাম বাংলার রীতি হল শ্বশুর বাড়ি এসে জামাইরা শালাদের সাথে একসাথে ভাত খায়। শ্বশুর তার স্ত্রী কে বলল, বউ, আজ বড় থাকায় ভাত দাও, আমি আর আমার জামাইবাবা একই থালায় ভাত খাব।
শ্বশুর আর জামাই একই থালায় ভাত খেতে বসলেন। নানা রকম তরকারী দিয়ে দুই জনে খাওয়া চালিয়ে যেতে লাগল। শ্বশুর ভাবলেন আজকে একটু, মজা করবেন। চালাকি করে, যেভাবেই হোক জামাইকে আজ ক্ষির খেত দেবেন না।
তিনি জামাই কে বললেন, জামাই, খাওয়া তো শেষ হয়েছে, এবার তাহলে হাত ধোও। জামাই দেখলো, শ্বশুর মশাই তাকে ক্ষির থেকে বঞ্চিত করার মতলব করেছেন। জামাইও কম চালাক নন। সে একটা গল্প ফেদে বসল, “হাত আর ধোব কি! আপনার বাড়িতে আসার সময় সামনে পড়ল এক প্রকান্ড সাপ। বললে বিশ্বাসই করবেন না, ঐযে শিকার উপরে ক্ষিরের হাড়িটা ঝুলতেছে না, ঐ অত উচু এক ফনা মেলে ধরলো আমার দিকে।
শ্বশুর বুঝতে পাড়লেন, ধড়া পড়ে গেছেন।জামাই ক্ষীরের কথা টের পেয়ে গেছে। তিনি তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, “তাই তো ক্ষীরের কথা তো একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম, আন, আন, ক্ষীর আন।
শাশুড়ি একটু মুচকি হাসিয়া তাড়াতাড়ি ক্ষীর এনে দিলেন। জামাই চিন্তা করলো, শ্বশুর আব্বা আমাকে ক্ষীর খাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছে, এই বার আমি তাকে ক্ষীর খাইতেই দেব না। জামাই শ্বশুর এর সাথে গল্পি আরম্ভ করলো, ” এখন কার কলিকালের কথা আর কি বলবো, আব্বা! বউরা আর স্বামীকে মানতে চায় না। এই যে ধরেন আপনাদের মেয়ে, যাকে আমি বিয়ে করেছি; আমি যদি তাকে বলি এই দিকে থাকো সে চলে যায় ঐদিকে” বলার সংগে সংগেই তা দেখিয়ে দেবার অজুহাতে জামাই ক্ষীর টুকু নিজের দিকে টানিয়া নিয়ে, ভাত গুলি শ্বশুর এর দিকে ঠেলে দিলো।
শ্বশুর দেখলেন, ঠকাইবার মতলবে, জামাই আজ আমাকে ক্ষীর খাইতে দিবে না। মনে মনে বললেন, আচ্ছা, দেখাইতেছি। উপদেশের ছলে শ্বশুর বললেন, ” তা বাবাজী তোমরে ছেলে ছোকড়া মানুষ। মিলমিশ হইয়া থেকো।
বলতে বলতে, কিভাবে মিলমিশ হয়ে থাকতে হবে, তা দেখানোর অজুহাতে ক্ষীর ও ভাত একসাথে মেখে ফেললেন।
বড় আনন্দের সংগ শ্বশুর আর জামাইর খাওয়া শেষ হল।

Comments

Popular posts from this blog

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

একটি ভিত্তিহীন গুজব উড়িয়ে দেওয়া: বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ফ্রেঞ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়নি৷

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন