দেড় হাজার সেনার লাশ কোথায়?

দেড় হাজার সেনার লাশ কোথায়?

কথিত বিদ্রোহ দমনের নামে শত শত বিমান ও সেনা সদস্যকে হত্যা করেন জিয়াউর রহমান। এমন দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের। প্রায় দেড় হাজার সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যের লাশ কোথায়, সেই তথ্য জানতে চান পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি করেন তারা।

স্বামী হারানো লায়লা আঞ্জুমান
স্বামী হারানো লায়লা আঞ্জুমান

ষাটোর্ধ্ব লায়লা আঞ্জুমান। স্বামী ফ্লাইট সার্জেন্ট তোফাজ্জল হোসেন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিখোঁজ হন তিনি। লায়লা শুনেছেন তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে জিয়াউর রহমানের সময়ে তার স্বামীর ফাঁসি হয়েছে। স্বামীর কবরের খোঁজ পেতে জাতীয় প্রেসক্লাবে হাজির হয়েছেন লায়লা।

তিনি বলেন, আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি, তখন আমার বিয়ে হয়। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার বাচ্চার ৬ মাস বয়সেই স্বামীকে হারালাম। আমার বাচ্চা তো বাবা বলেও ডাকতে পারেনি। বাবার আদরও পায়নি। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে যে আমি তাকে তার বাবার কবরটাও দেখাতে পারিনি।

শুধু লায়লা নন, তার মতো শত শত পরিবার শনিবার (২ অক্টোবর) সকালে হাজির হন জাতীয় প্রেসক্লাবে। আলোচনা সভা পরিণত হয় শোক সভায়।

এক ভুক্তভোগী বলেন, স্বামীকে হারিয়ে আমি একটা পোশাক কারখানায় কাজ নিই। আমার বলতে কোনো লজ্জা নেই। আমি কর্ম করেছি। একজন বলেন, আমার মাকে আমার দাদার বাড়িতেও ঠাঁই দেওয়া হয়নি। সে তার স্বামীকে হারিয়েছেন। তাকে নানাভাবে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তাকে অলক্ষুণে বলা হতো।

১৯৭৭ সাল। রাষ্ট্র ক্ষমতায় জিয়াউর রহমান। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বিমানবাহিনীতে ঘটে অভ্যুত্থানের ঘটনা। সেই অভ্যুত্থান দমনের নামে ফায়ারিং স্কোয়াড ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রায় দেড় হাজার সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যকে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেই লাশগুলোর কবর কোথায় তা কেউ জানে না।

আলোচনা সভায় সংহতি জানান বিভিন্ন পেশার অনেকেই। বক্তারা বলেন, একদিকে তাদের যেমন হত্যা করা হয়েছে তেমনি অন্যদিকে পরিবারগুলোও পায়নি সরকারি সহায়তা।



সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, জিয়াউর রহমান একজন আদর্শহীন মানুষ। তিনি মানুষকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি তার সঙ্গীকে বিশ্বাস করতেন না। কর্নেল তাহেরের মতো লোককে বিশ্বাস করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন নিজেকে এবং নিজের স্বার্থকে।

বক্তারা জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি করেন।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ফাঁসি দেওয়ার পর আইন করা হয়েছে। এ ধরনের নজির পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি করা দরকার।

ওই একই সময় জাপান এয়ার লাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকায় আনেন জাপানি রেড আর্মির কমিউনিস্টরা। সেই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যুত্থান জড়িত কি না তা আজও অজানা।


Comments

Popular posts from this blog

ভাড়াটিয়া-ভাড়াদার আইনের জটিলতা পার হওয়া: ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি গাইড

একটি ভিত্তিহীন গুজব উড়িয়ে দেওয়া: বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ফ্রেঞ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়নি৷

অধ্যায় 2: বাংলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন